ভ্রমণ মানুষের চিন্তাশক্তি প্রসারিত করতে সাহায্য করে। জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়। নতুন নতুন জাতিগোষ্ঠী ও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করে। ভ্রমণের মাধ্যমে আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টির নিদর্শনগুলো মানুষকে তাঁর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।
এ জন্য মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পৃথিবীতে ভ্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো কিভাবে তিনি সৃষ্টি শুরু করেছেন? অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২০)
ভ্রমণ শুধু আল্লাহকে চিনতে সহায়ক নয়, বরং এটি মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায়।বিভিন্ন জনপদের উন্নতি ও উন্নতির মাধ্যম, নতুন নতুন প্রযুক্তি, অবনতি ও অবনতির কারণ সম্পর্কে ধারণা দেয়। ফলে মানুষ এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে ইরশাদ করেন, ‘আর তারা কি জমিনে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা দেখত, কেমন ছিল তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম। অথচ তারা তো শক্তিতে ছিল এদের চেয়েও প্রবল।
আল্লাহ তো এমন নন যে আসমানসমূহ ও জমিনের কোনো কিছু তাঁকে অক্ষম করে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৪৪)
উল্লিখিত আয়াতগুলোতে পূর্ববর্তী বিভিন্ন সভ্যতার বিকাশ ও অবসান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে, যেখানে হিদায়াতের ও আখিরাতে নাজাত লাভের শিক্ষা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ভ্রমণ করো, সুস্থ থাকবে, রিজিকে বরকত লাভ করবে। (বায়হাকি, হাদিস : ১৩৫৮৮)
এই হাদিসটি সনদগতভাবে খুব দুর্বল হলেও হাদিসের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল পাওয়া যায়।
ভ্রমণ মানুষকে একঘেয়ে জীবন থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ দেয়। একঘেয়ে জীবন মানুষের ওপর বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব েফলে; ভ্রমণের ফলে তা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়। অন্যদিকে ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ নতুন পেশা, নতুন পণ্য ও নতুন সম্ভাবনা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে, যা কাজে লাগিয়ে সে তার উপার্জন বাড়াতে নতুন পদক্ষেপ নিতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন নামাজ সমাপ্ত হবে, তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ১০)
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%86%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b2-%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%a5%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a7/
এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভ্রমণের মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রবল শক্তির নিদর্শন সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন, পাশাপাশি জমিনে ছড়িয়ে থাকা আল্লাহর অসংখ্য অগণিত অনুগ্রহ (রিজিক)অনুসন্ধানেরও তাগিদ দিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত, মাঝে মাঝে ভ্রমণের চেষ্টা করা, আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন দেখে ঈমান দৃঢ় করতে চেষ্টা করা এবং আল্লাহর ছড়ানো ছিটানো রিজিকগুলো মানুষ কিভাবে কাজে লাগাচ্ছে, নিজেদের দক্ষতাকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে মানুষ আরো বেশি সফলতা অর্জন করছে, তা থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করা। কেউ যদি এই নিয়তে ভ্রমণ করে, তাহলে ভ্রমণও তার জন্য ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে ইনশাআল্লাহ।