ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো মুদ্রার একটি ডিজিটাল রূপ, যা এনক্রিপশন কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে লেনদেন যাচাই করে। এর মাধ্যমে ক্রস–বর্ডার নামে নতুন লেনদেন সুবিধার উদ্ভব হয়েছে, যার ফলে ব্যাংক ও রেমিট্যান্স পরিষেবা গ্রহণে কোনো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয় না। এতে ব্যক্তিপর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব হয়। বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি একত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করছে। এতে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যবস্থা একটা ব্লকের আওতায় এসে পড়েছে। ব্যক্তিগত সম্পদ সংরক্ষণের জন্য আধুনিক সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর মানুষেরা ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল গোল্ড মনে করে।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও ক্রিপ্টোকারেন্সির বহুবিধ ব্যবহার দেখা যায়। দেশের বার্ষিক আয়ে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের ফলে আগের তুলনায় স্বল্প খরচে রেমিট্যান্স খাতে লেনদেন করা সম্ভব হয়। জনবহুল বাংলাদেশে একটি বড় জনগোষ্ঠী ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় নেই। তাদের সহজ ও দ্রুত সময়ে এই সেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ক্রিপ্টোগ্রাফি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি। ফলে আরও বেশি মানুষ আর্থিক পরিষেবা অ্যাক্সেস করতে পারছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ভূমি নিবন্ধন ও আর্থিক পরিষেবা দানে ক্রিপ্টোকারেন্সি দারুণভাবে ভূমিকা রাখছে। সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত হলে ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিনিয়োগের একটি ক্ষেত্র তৈরি করবে, ফলে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে। এই ব্লকচেইন প্রযুক্তি বাংলাদেশে ফিনটেক প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হচ্ছে। ফিনটেক ইনোভেশনের মাধ্যমে নতুন আর্থিক পণ্য ও পরিষেবা দেশের সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে। ব্লকচেইনের স্বচ্ছ ও অপরিবর্তনীয় ফিচারের কারণে সরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি–সম্পর্কিত ক্ষেত্রে প্রযুক্তি শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির কিছু নেতিবাচক প্রভাবের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই মুদ্রাকে নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হচ্ছে। তবু বৈধ ও অবৈধভাবে দেশে বাড়ছে বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার। দেশের বাজারগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে এই বিটকয়েন। আর তা কিনছেন দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা। বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি সরকারিভাবে স্বীকৃত নয় এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেড করা বা ব্যবহার করা প্রায় ক্ষেত্রে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। এর কারণে ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ে জড়িত ব্যক্তিরা আইনি ঝামেলায় পড়তে পারে। নিয়ন্ত্রক কাঠামো না থাকার ফলে ব্যবহারকারীরা জালিয়াতি, কেলেঙ্কারি ও বাজারের কারসাজির মতো ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। এর সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা ও বাজার ধারণা না থাকার ফলে মানুষ বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে সরকারের উদ্বিগ্ন হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো মানি লন্ডারিং, যার ফলে অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোক্তা সুরক্ষা আইনের অনুপস্থিতি ব্যবহারকারীদের জন্য মুদ্রার নিরাপত্তাহীনতার কারণ।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠছে, যা থেকে রেহাই পায়নি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তির বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও। স্যাম ব্যাঙ্কম্যান ফ্রাইড ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন শিল্পের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। একই সঙ্গে তিনি এফটিএক্স এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচিত। বর্তমানে তিনি ফৌজদারি অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তিনি এফটিএক্স কোম্পানির গ্রাহকদের কাছ থেকে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি চুরি করেছেন। বর্তমানে এফটিএক্স কোম্পানিটি দেউলিয়া। তবে আমাদের এর ব্যবহারে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশের আইন ধারা নিষিদ্ধ কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
ইন্টারনেটভিত্তিক মিডিয়াগুলোয় ব্যক্তিগত বা আর্থিক তথ্য শেয়ার করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ক্রিপ্টোকারেন্সির ঝুঁকি ও সুবিধা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে অবগত হতে হবে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধমে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।