ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এক ধরনের বিকেন্দ্রিকৃত বা ডিসেন্ট্রালাইজড ডিজিটাল মানি। ব্লকচেইন টেকনোলজির মতো বিশেষায়িত প্রযুক্তি হলো ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল ভিত্তি। এর লেনদেনের নিরাপত্তা ক্রিপ্টোগ্রাফি দিয়ে মোড়া। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সি বুঝতে হলে আগে জানা প্রয়োজন ব্লকচেইন, ডিসেন্ট্রালাইজেশন এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি।
ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে ব্লকচেইন হলো এক ধরনের ডিজিটাল লেজার। এটি ব্যবহারের ক্ষমতা শুধু আনুষ্ঠানিক ব্যবহারকারীদের হাতেই থাকে। এই লেজার সিস্টেমে সব ধরনের লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
এই লেনদেনের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর–সব ধরনের সম্পদই থাকতে পারে। ব্লকচেইনে থাকা কোনো তথ্য পরিবর্তন করা যায় না।
কোনো সরকার বা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রিপ্টোকারেন্সি বা এর লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করে না। এ কারণেই একে ডিসেন্ট্রালাইজড ডিজিটাল মানি বলা হয়।
ধারণাগতভাবে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে কাজ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি।
ক্রিপ্টোকারেন্সির আদান-প্রদান হয় অনলাইনে। এ ধরনের বিনিময়ের সব তথ্য গোপন থাকে, বেশির ভাগ সময়েই থাকে অজ্ঞাত। বিনিময়ে ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের একটি পদ্ধতি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোপনে ও নিরাপদে যোগাযোগের জন্য ক্রিপ্টোগ্রাফি পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছিল।
এই পদ্ধতিতে প্রচলিত ভাষা বা সংকেতে লেখা তথ্য এমন একটি কোডে লেখা হয়, যা ভেঙে তথ্যের নাগাল পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
এখন বিশ্বে হাজারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু আছে। তবে বিনিময় মূল্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বিটকয়েন, এথেরিয়াম, টেথার, বাইন্যান্স কয়েন, রিপল, লাইটকয়েন প্রভৃতি।
এখন পর্যন্ত চালু থাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিটকয়েন। এর বিনিময় মূল্যও সবচেয়ে বেশি। সাতোশি নাকামোতো ২০০৯ সালে বিটকয়েন তৈরি করেন।
এর বাজার পুঁজির পরিমাণ প্রায় কয়েক শ বিলিয়ন ডলার
মাইনিং নামের একটি জটিল প্রক্রিয়ায় একেকটি ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি হয়। মাইনিং প্রক্রিয়ায় কিছু সুনির্দিষ্ট গাণিতিক ধাঁধাঁ সমাধান করে একেকটি ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করতে হয়।
এই ধাঁধাঁ সমাধানের জন্য আবার প্রয়োজন হয় বিশেষ কম্পিউটার সিস্টেম।
মাইনিং প্রক্রিয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরির পর আসে তা বেচাকেনা ও সংরক্ষণের বিষয়টি। বিভিন্ন ডিজিটাল ওয়ালেটে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি সংরক্ষণ করা হয়।
এই ডিজিটাল ওয়ালেটগুলো আবার দুই ধরনের হয়, হট ও কোল্ড। হট ওয়ালেট ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং এটিতে চুরি ও জালিয়াতি করা সহজ। অন্যদিকে কোল্ড ওয়ালেট ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকে না।
এই ওয়ালেট অধিকতর নিরাপদ হলেও এ থেকে লেনদেন চালানো তুলনামূলক কঠিন।
এক ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে আরেকটিতে ক্রিপ্টোকারেন্সির আদানপ্রদান হয়ে থাকে। এই লেনদেনের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্য ও সেবা কেনা যায়।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত এক বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সব ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতিটি লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হয়।
প্রত্যেকটি বিষয়েরই সুবিধা ও অসুবিধা থাকে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রিপ্টোকারেন্সির এই দিকটি।
লেনদেন ব্যবস্থায় কঠোর নিরাপত্তা ও পরিচয় গোপন থাকা— এই দুটি বিষয়ই হলো ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রধান সুবিধা। এই ব্যবস্থায় একবার লেনদেন হওয়ার পর তা ফিরিয়ে আনা কঠিন। ফলে এই লেনদেন ব্যবস্থাটি অপরিবর্তনীয়।
আবার এই ব্যবস্থাটিতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব একেবারেই কম বলে অনেকে একে স্বর্ণের সঙ্গেও তুলনা করে।
সুবিধার উল্টো পিঠেই থাকে অসুবিধা। ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রধান অসুবিধা হলো এটি সাধারণের বোধগম্য বিষয় নয়। পুরো ব্যবস্থাটিই বেশ জটিল হওয়াই এর প্রধান কারণ।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আকৃষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এতে কম বিনিয়োগ করেই ব্যাপক লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আবার হুট করে দর নেমে গেলে রাস্তায় নামার আশঙ্কাও প্রবল। অর্থাৎ, সোজা কথায় ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে ঝুঁকি অনেক বেশি।
অন্যদিকে ব্যবহারকারীর পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকে বলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বেশি হওয়ার অভিযোগ আছে।
বলা হয়, কঠোর গোপনীয়তা থাকায় অবৈধ কর্মকাণ্ড-সংশ্লিষ্ট লেনদেনের ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে ক্রিপ্টোকারেন্সি।