ঋতুরাজ বসন্ত শেষ হবার পথে। এরপরই শুরু হবে গ্রীষ্মকাল। ঝড়বৃষ্টি ছাড়া এ ঋতুতে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি গরম অনুভূত হয়। বাংলাদেশে সাধারণত বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ-এ দু’মাসকেই গ্রীষ্মকাল হিসেবে ধরা হয়। তবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ দুই মাস ছাড়াও ইদানীং স্বাভাবিকের তুলনায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।
অতিরিক্ত গরম সব সময়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত তাপ যে কোনো বয়সের বিশেষ করে শিশু ও যাদের বয়স ৬০-এর কাছাকাছি বা তার চেয়ে বেশি তাদের ঝুঁকি এ সময় সবচেয়ে বেশি থাকে। গরমে শারীরিক অস্বস্তি ও নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। একটু সচেতন হলেই আমরা এসব রোগবালাই থেকে দূরে থাকতে পারি।
তবে সময়মতো সচেতন না হলে অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতিরিক্ত গরমে সাধারণত যে সব সমস্যা দেখা দিতে পারে তারমধ্যে ঘামাচি একটি। তাই ঘামাচি প্রতিরোধের উপায়গুলো জেনে রাখা ভালো। আর ঘামাচি যদি হয়েই যায়, সে ক্ষেত্রে কী করবেন, সেটিও জেনে নিন।
ঘাম ও ঘামাচি প্রতিরোধে যা করবেন
গরমে ঘাম হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কেউ হয়তো একটু বেশি ঘামেন, কেউ কম। ঘাম কম হোক কিংবা বেশি, সেটা আপনি কীভাবে সামলাচ্ছেন, সেটিই হলো আসল কথা।
শরীর ঘেমে গেলেই পরিষ্কার নরম একটি সুতি কাপড় ভিজিয়ে নিন। কাপড়টি রুমাল বা তোয়ালেও হতে পারে। ভেজা কাপড়টি দিয়ে দ্রুত ঘাম মুছে ফেলুন। শরীরের কিছু অংশ বেশি ঘামে, যেমন বগল, কুঁচকি বা গলা। ঘেমে গেলে পুরো শরীর মুছতে না পারলেও এসব জায়গা মুছে ফেলতে চেষ্টা করুন।
গরমে সুতি পোশাক পড়তে পারেন। ঘাম হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব পোশাক বদলে ফেলা ভালো। প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করুন। বারবার গোসল না করলেও ক্ষতি নেই। একবার ভালোভাবে গোসল করাই যথেষ্ট।
এছাড়া ঘাম কমাতে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। ঘামাচি প্রতিরোধক পাউডারই ব্যবহার করতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেকোনো পাউডারই কাজে দেবে, তবে সুগন্ধবিহীন পাউডার বেছে নেয়া ভালো। কারণ, সুগন্ধি উপকরণের কারণে কারও কারও ত্বকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ত্বকে কোনো সমস্যা না হলে, সুগন্ধি পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
বাইরে গেলে ঘাম বেশি হয়ে থাকে। তাই বের হওয়ার সময় সঙ্গে রাখুন বাড়তি রুমাল বা কাপড়। বারবার ঘামলে ত্বক মোছার পর আবার পাউডার লাগিয়ে নেয়া ভালো। তাই ব্যাগে ছোট কৌটা বা বাক্সে পাউডার সঙ্গে নিয়ে বের হতে পারেন।
ঘামাচি হলে যা করবেন
ঘামাচি প্রতিরোধের জন্য প্রথম পরামর্শই হলো অতিরিক্ত গরম পরিবেশ এড়িয়ে চলা। তবে বাস্তবতা হলো, সব সময় গরম পরিবেশ পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। তাই ঘামাচি প্রতিরোধের জন্য বরং ঘামের বিষয়েই বেশি সচেতন থাকা প্রয়োজন।
ঘামাচির জায়গাটা ঘেমে গেলে প্রথমে আলতো করে মুছে নিন। এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার ও নরম সুতি কাপড় ভিজিয়ে নিতে হবে। পিঠে ঘামাচি হলে একাধিকবার গোসল করতে পারেন।
চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। তবে সবাই সব ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন না। যেমন শ্বাসকষ্টের রোগী নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ সেবন করলে শ্বাসকষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই অ্যান্টিহিস্টামিন সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো।
অনেক সময় দেখা যায়, ঘামাচি হওয়ার পর সেখানে আলাদা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ওই জায়গায় বারবার ঘষা লাগলে এ রকম হতে দেখা যায়। এমন ক্ষত হলে, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মলম ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। তাই এ রকম ক্ষত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ঘামাচি হলে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। যন্ত্রণা খানিকটা কমবে, তবে এটি ঘামাচির চিকিৎসা নয়।