সভ্যতার আদি লগ্ন থেকে আজ অবধি ক্রমাগত অগ্রযাত্রার যে ধারা বহমান রয়েছে, তার মূল ভিত্তি হলো গবেষণা। অজানাকে জানার জন্য, সত্যান্বেষণ এবং সর্বোপরি সম্ভাবনার নবদ্বার উদ্ঘাটনের অভিপ্রায়ে মানুষ গবেষণায় ব্রতী হয়। আদিম যুগের আগুন আবিষ্কার থেকে আজকের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি—সবই দীর্ঘদিনের অবিচল গবেষণার সোনালি ফসল। সুতরাং উন্নয়নের ক্রমধারা অব্যাহত রাখতে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার কিছুটা সুযোগ থাকলেও স্নাতক পর্যন্ত তা নেই বললেই চলে। তাই শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধকরণ এবং তাদের জন্য গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি এখন সময়ের দাবি। তবে তার আগে শিক্ষার্থীদের এটা জানা দরকার যে গবেষণা কেন তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরা যাক:
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথ সুগম
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারিকুলামগুলো প্রায়ই গবেষণাধর্মী। স্নাতক থেকে পিএইচডি বা পোস্ট ডক্টরেট পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই গবেষণা করতে হয়। এসব গবেষণা ভালো ক্যারিয়ার গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই সব গবেষণা থেকে প্রবন্ধ আকারে যদি ভালো জার্নালে প্রকাশ করা যায়, তা একাডেমিক ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা একজন প্রার্থীকে অন্য সবার থেকে আলাদাভাবে এগিয়ে রাখে। একবিংশ শতকের এই বিশ্বায়নের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার তাগিদে মানুষের মধ্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হচ্ছে প্রতিবছর। তবে এমআইটি, হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, স্ট্যানফোর্ড প্রভৃতি কিউএস র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রার্থীর গবেষণায় বিশেষ দক্ষতা ভর্তি এবং বৃত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উচ্চ মানসম্পন্ন গবেষণা প্রবন্ধ এবং পর্যাপ্ত সাইটেশনধারী প্রার্থীদের কখনো কখনো GRE/IELTS স্কোর শিথিল বা মওকুফ পর্যন্ত করতে দেখা যায়। সুতরাং সহজেই অনুমেয় যে সারা বিশ্বে উচ্চশিক্ষার অন্তর্ভুক্তিতে গবেষণার গুরুত্ব কতটা প্রণিধানযোগ্য। সুতরাং, আমাদের শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই যদি গবেষণা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে এবং গবেষণা অব্যাহত রাখে, তবে তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথ যেমন সুগম হবে, তেমনি উচ্চশিক্ষায় গুণগত মান নিশ্চিত করাও সহজ হবে।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ
ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিভার্সিটি অব সিডনি এই স্কলারশিপ দেয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোর্স করার জন্য স্কলারশিপ পেতে চাইলে প্রথমে যেকোনো কোর্সে এনরোল করতে হবে। সেজন্য একাডেমিক সাফল্য এবং গবেষণায় আগ্রহ থাকতে হবে। একটি শর্তহীন অফার লেটার থাকা আবশ্যক। এটি পেলে টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকুফ করা হয়।
গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের জন্য সব মিলিয়ে ৬০০টিরও বেশি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম অফার করে, যার কারণে স্বল্প থেকে বিনা খরচে পড়াশোনা শেষ করা যায়। এখানে মেধা, ইকুইটি, খেলাধুলাসহ নানা ক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়া যায়। তাই অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে চাইলে গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি হতে পারে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে একাডেমিক এক্সিলেন্স স্কলারশিপ পেলে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ২৫ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। এজন্য ন্যূনতম ৫.৫ বা সমতুল্য জিপিএ থাকতে হবে।
কোর্সের জন্য ভর্তি এবং ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে। পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করতে হবে। আর একাডেমিক মেরিট স্কলারশিপের ক্ষেত্রে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য ২০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। এজন্য ন্যূনতম জিপিএ ৫ থাকতে হবে। কোর্সের জন্য ভর্তি এবং ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে।
মেলবোর্ন রিসার্চ স্কলারশিপ
মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি গবেষণা ডিগ্রি বা ডক্টরাল ডিগ্রির ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের ফুল ফান্ড স্কলারশিপ দেয়। টিউশন ফি মওকুফ করার পাশাপাশি জীবন-ভাতার জন্য বছরে ৩৪ হাজার ৪০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ২ হাজার থেকে ৩ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার স্থানান্তর ভাতা, ওভারসিজ স্টুডেন্ট হেলথ কভার (ওএসএইচসি) প্রদান করে।
ডেকিন ভাইস-চ্যান্সেলরস ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ
ডেকিন ইউনিভার্সিটি কর্তৃক এ জনপ্রিয় স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি যেকোনো কোর্স করা শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত। যোগ্য শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বা ৫০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ পায়। এজন্য ডেকিন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে এবং পূর্ববর্তী গবেষণায় ৮৫ শতাংশ স্কোর অর্জন করতে হবে।
এন্টারপ্রাইজ রিসার্চ স্কলারশিপ (ইআরএস)
ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য ইআরএস বেশ লাভজনক স্কলারশিপ, যা পেতে একাডেমিক ফলাফল এবং গবেষণার সম্ভাবনা থাকতে হবে। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য অংশীদার বিশ্ববিদ্যালয় এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি পরিচালনা করে। এতে সর্বোচ্চ দুই বছরের মাস্টার অব রিসার্চ এবং চার বছরের পিএইচডির জন্য বার্ষিক ২৮ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার পাওয়া যায়।
মোনাশ ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল মেরিট স্কলারশিপ
মোনাশ ইউনিভার্সিটি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর ১০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার স্কলারশিপ দেয়। এজন্য শিক্ষার্থীকে সব শর্তের পাশাপাশি মোনাশ অ্যাম্বাসেডর হতে হবে। এজন্য প্রথমেই পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করতে হবে।