মামার বাড়ি গিয়ে পাকা জামের মধুর রসে ঠোঁট রঙিন করার ছড়া ছোটবেলায় নিশ্চয়ই পড়েছেন? সুমিষ্ট এই ফল কেবল ঠোঁটই রঙিন করে না, বরং শরীরের জন্য অনেক উপকারিতাও বয়ে আনে। দেশি ফল জামের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। যদিও এটি বছরে স্বল্প সময়ের জন্য পাওয়া যায়। তবে যতটা সময় পাওয়া যায়, মৌসুমী এই ফল রাখুন আপনার খাবারের তালিকায়।
জামের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রামে জামে থাকে-
ক্যালরি: ৬২
কার্বোহাইড্রেট: ১৫.৫ গ্রাম
ফাইবার: ১.৫ গ্রাম
ভিটামিন সি: ১৮ মিলিগ্রাম
আয়রন: ১.৪১ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম: ৫৫ মিলিগ্রাম
এখন দেখা যাক এই গ্রীষ্মকালীন ফলের অসাধারণ উপকারিতাগুলো কী-
১. পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর
জাম প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি ভিটামিন সি, আয়রন এবং অ্যান্থোসায়ানিন জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি চমৎকার উৎস, যা ফলটিকে গাঢ় বেগুনি রঙ দেয়। জার্নাল অফ ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
২. হজমে সাহায্য করে
গ্রীষ্মকালে অনেকে হজমের সমস্যার সম্মুখীন হন এবং জাম এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। এই ফলে ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা হজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। জার্নাল অফ এথনোফার্মাকোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, জামে থাকা ট্যানিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েড প্রদাহ কমায় এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে।
৩. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য জাম একটি আশীর্বাদ। এই ফলে জাম্বোলিন এবং জাম্বোসিনের মতো যৌগ রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে কাজ করে। জার্নাল অফ মেডিসিনাল ফুডে প্রকাশিত গবেষণা নিশ্চিত করে যে, এই যৌগগুলি স্টার্চকে চিনিতে রূপান্তরিত করার গতি কমাতে সাহায্য করে।
৪. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
গ্রীষ্মের রোদ আমাদের ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ব্রণ এবং শুষ্কতার মতো সমস্যা দেখা দেয়। জামের উচ্চ ভিটামিন সি এবং অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট বৈশিষ্ট্য আমাদের ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং এই সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। জার্নাল অফ আয়ুর্বেদ অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, জাম ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে এবং দাগ কমাতে সাহায্য করে, যা ত্বককে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা দেয়।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
জামে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের গবেষণা অনুসারে, এই পুষ্টি উপাদানগুলো শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।