সম্পর্ক সৃষ্টি করতে অথবা সঙ্গী হিসেবে আপনি যতই নিখুঁত হননা কেনো, সম্পর্ক প্রাণবন্ত রাখতে সবসময় সচেষ্ট থাকতে হয়। বিয়ের অনুষ্টান শেষ। “অতঃপর তাহারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো”– গল্পের মতোন জীবনের কাহিনীর সমাপ্তি ঘটে না। বিয়ের মাধ্যমে বরং দুইজন মানুষের শুরু হয় নতুন একটি জীবনের। অনুগত ব্যবহার নয়, এই নতুন জীবন নির্ভর করে ভালোবাসা,পারস্পারিক সমঝোতা ও সততার উপর।
দম্পতিদের জন্য সুখী সম্পর্ক তৈরির গাইড
১. রাতে একে অপরকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারেন। দুজন সঙ্গীর মধ্যে শারীরিক বন্ধন খুব গুরুত্বপূর্ণ। যত সময় সঙ্গীর বাহুবন্ধনে সময় কাটবে, তত ঘনিষ্ঠ হবে সম্পর্ক। তাই দুজনেই কাছে যেতে চেষ্টা করুন।
২. একে অপরের প্রতি হবেন মনোযোগী। সব সময় আমাদের একে অপরের প্রতি অখণ্ড মনোযোগ দিতে হবে। সঙ্গীকে দিতে হয় গুরুত্ব। কাগজ পড়ছেন আর সঙ্গী কথা বলে চলেছে, আপনি শুধু হু হু করলেন, এতে সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে। আজকাল তো এই অসুখ বেশি দেখা যায়, মোবাইলের কারণে। একজন মুঠোফোন স্ক্রলিং করছেন আরেকজন হচ্ছেন বিরক্ত, এসব বিষয় দাম্পত্যের জন্য মোটেও সুখকর নয়। আর দুঃখে–সুখে, অসুস্থ অবস্থায় থাকতে হবে একজন আরেকজনের পাশে।
৩. সব সময় খুঁজে নিতে হবে সমঝোতার পথ। সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে দুজনকেই। এমন হয়, দুজনের মত হয়তো উত্তর আর দক্ষিণ (মানে পুরোই বিপরীত)। তারই মাঝে খুঁজতে হবে সমাধান। দুজনের মতের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব হলেও সমঝোতা খুঁজলে পাওয়া যায়। পরস্পর খুলে বলি মনের কথা, আর এভাবে স্পষ্ট একটা সমঝোতায় আসা যায়। একটি সম্পর্ক দুটো বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল, এক. নিজের মিলগুলোকে উপলব্ধি করা আর দুই. অমিলগুলোকে সম্মান করা।
৪. প্রত্যেককে নিজেদের কিছু সময় একলা কাটাবার সুযোগ দেওয়া উচিত। দুজন সঙ্গী গভীর প্রেমে বলেই দুজনকে সব সময় একত্রে থাকতে হবে তা নয়। তাঁরা চাইবেন সব সময় একত্রে থাকতে, কিন্তু কিছু সময় একা থাকলে সেই সম্পর্ক ছুটে যাবে এমন নয়। স্বাস্থ্যকর সম্পর্কে প্রত্যেকে কিছুটা সময় পাবেন একান্ত নিজের জন্য। সেটাই হওয়া উচিত।
৫. পরস্পর বিশ্বাস করা উচিত। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস সম্পর্ককে আরও জোরালো করে। একটি সম্পর্ক শক্তিশালী রাখার জন্য এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
৬. একে অপরকে ক্ষমা করে দিন। আমরা সবাই মাঝেমধ্যে ভুল করি, এতে একে অপরকে আহত করার মতো বিষয়ও হয়। সম্পর্কের বাঁধন মজবুত থাকলে ক্ষমা করার সুযোগ থাকে আর এতে বাঁধন আরও শক্তিশালী হয়। সম্পর্কে সত্যিকারের কেয়ারিং থাকলে, ভালোবাসা থাকলে অন্যজন কষ্ট পাবেন না।
৭. একে অপরের স্বপ্নকে সম্মান করবেন। নিজেদেরকে আরও ভালো করতে আর লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের মোটিভেট করে স্বপ্ন। প্রিয়জনের সমর্থন পেলে সে স্থানে পৌঁছানো সহজ হয়। একই সঙ্গে যেমন হতে চাই, তেমন হতে সাহায্য করে।
৮. পরস্পরকে প্রশংসা করুন। সঙ্গীর যেকোনো সাফল্যে অভিনন্দন জানান। কোনো বিশেষ দিনে বা সময়ে সঙ্গীকে দারুণ দেখালে প্রশংসা করুন। সত্যিকার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা পেলে সেটা চিরদিন মনে থাকে। সময় যায় কিন্তু সেই স্মৃতিটুকু থেকে যায়।
৯. নিজের উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা–ভয় সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করুন। দুশ্চিন্তা, নিরাপত্তার অভাব, ভয়—এসব হলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এরা সব সময় নিজে নিজে চলে যাবে এমন ধারণা অবাস্তব। তাই সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করলে, দুজনে মিলে সেটা মোকাবিলা করলে এ থেকে বের হওয়ার পথ পাওয়া যায়।
১০. সমস্যা যা–ই হোক, একে অপরকে সমর্থন দিন। প্রিয়জন জীবনের একটা সময়ে হয়তো কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, তখন যেভাবে সম্ভব তাঁর পাশে থেকে তাঁকে সমর্থন দেওয়া উচিত। বিপদে একে অপরের পাশে নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়ালে সম্পর্ক হবে মধুর আর মজবুত।
১১. একে অপরকে দোষারোপ করা উচিত নয়। সংসারে একটা কিছু ঘটলে সঙ্গী একে অপরকে এ জন্য দোষারোপ করা (ব্লেম গেম) খুব খারাপ। বরং মিটমাট না হওয়া পর্যন্ত এমন করা ঠিক নয়, পরে একে অপরকে ভালোবেসে ভুলে যাবে সব।
১২. সফল না হলেও হাল ছেড়ে দেওয়া কখনো ঠিক নয়। জীবনে বাধাবিপত্তি থাকবেই, কিন্তু তার মানে এই নয়, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত সফলতা অর্জনের অঙ্গীকারে দুর্বল হয়ে পড়ব; বরং একজন ব্যর্থ হলে অপরজন তাঁকে নতুন করে উজ্জীবিত করতে হবে। ‘তুমি পারবে’ এই ধারণা সঙ্গীর ভেতর আপনাকেই তৈরি করতে হবে।