সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের আধুনিক জীবনে নিয়ে এসেছে এক নতুন বাস্তবতা। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা আর স্মার্ট ফোনের যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় অন্যতম মাধ্যমগুলো হচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (টুইটার)। যা ব্যবহার করে খুব সহজেই দেশ বিদেশে যোগাযোগ করা সম্ভব। পাশাপাশি বর্তমানে সংবাদের উৎস হয়ে উঠেছে এসব মাধ্যম। তবে এগুলোর মধ্যে এমন কিছু অ্যাকাউন্ট আছে যার মাধ্যমে সমাজে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্যারডি অ্যাকাউন্ট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা জন্য প্রথম শর্ত একটি প্রোফাইল বা অ্যাকাউন্ট খোলা। যার মাধ্যমে ওই ব্যক্তি অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন বা তথ্য শেয়ার করতে পারেন। এসব মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই বিশিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট দেখা যায়। তবে হাস্যকর বা শুধুমাত্র মজা করার জন্য যদি এসব আইডি খোলা হয় তখন সেগুলোকে বলা হয় প্যারডি অ্যাকাউন্ট। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রোফাইলের বায়োতে ‘প্যারডি অ্যাকাউন্ট’ লেখা থাকে। দেশে-বিদেশের স্বনামধন্য খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদ ও তারকাদের নামে রয়েছে অসংখ্য প্যারডি অ্যাকাউন্ট।
ফেসবুক বা এক্স অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত করা জন্য ব্যবহারকারীরা প্রোফাইল ভেরিফাইড করে থাকেন। প্রোফাইল ভেরিফাইড করা হলে ব্লু ব্যাজ টিক দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। যা দেখে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব অ্যাকাউন্টটি ভেরিফাইড। প্রথম দিকে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাইড বা ব্লু ব্যাজ নেয়ার জন্য কিছু নিয়ম থাকলেও এখন মাসিক বা বার্ষিক ডলার বিনিময়ের মাধ্যমে এই ব্যাজ নেয়া সম্ভব। ফলে যারা প্যারডি অ্যাকউন্ট ব্যবহার করে তারা ডলার বিনিময়ের মাধ্যমে ব্লু ব্যাজের জন্য আবেদন করে। তবে শর্ত হচ্ছে প্রোফাইলের নিচে অবশ্যই ‘প্যারডি’ উল্লেখ করতে হবে। যেনো সহজেই মানুষ বুঝে প্রোফাইলটি ‘প্যারডি অ্যাকাউন্ট’।
ইলন মাস্কের এক্স প্যারোডি অ্যাকাউন্টকে স্বীকৃতি দেয়ার পরেই মূলত খ্যাতিমান ব্যক্তিদের ভেরিফায়েড প্যারোডি অ্যাকাউন্ট দেখা যায়। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন, আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, ধনকুবের বিল গেটস, ওপেন এআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যান, ইংল্যান্ডের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের এবং বর্তমান রাজা চার্লস এমনকি ইলন মাস্কের নিজের নামেই ৪/৫টি প্যারোডি অ্যাকাউন্ট দেখা যায়।
প্যারডি অ্যাকাউন্টের সমস্যা
বর্তমানে প্যারডি অ্যাকাউন্টের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভুয়া আর বিভ্রান্তিকর তথ্যর উৎস হয়ে দাঁড়ানো। বিশেষ করে এক্সের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে অনেক বেশি। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্লু টিকমার্ক বা ভেরিফায়েড চিহ্ন দেখে এক সময় নিশ্চিতভাবে বোঝা যেত, এটি আসল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানেরই অ্যাকাউন্ট। তবে ২০২২ সালের অক্টোবরে টুইটার কিনে নেন ইলন মাস্ক। এরপর অর্থের বিনিময়ে এই ব্লু ব্যাজ পাওয়ার সহজ ব্যবস্থা চালু করেন তিনি। তখন থেকে যে কেউ যেকোনো নামে নিজের এক্স অ্যাকাউন্টটি ভেরিফায়েড করে নিতে পারেন। এতে বিভিন্ন শর্ত থাকলেও তা খুব একটা কাজ হচ্ছে না বরং প্যারোডির ফাঁদে পড়ছে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবহারকারী সবাই। অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্লাটফর্ম ডিসমিসল্যাব এর প্রকাশিত এক প্রতিবেন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে শুধু বাংলাদেশেই অন্তত নয়টি ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে প্যারডি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ক্রিকেটারদের নিয়ে।
এদিকে গত ৫ মার্চ ফেসবুকে দেখা দেয় বিভ্রাট। পর এক্সের একটি অ্যাকাউন্ট, যার নাম হিসেবে লেখা ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে আশার বাণী জানিয়ে লেখা হয়, ‘চিল, কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন সব ঠিক হয়ে যাবে।’ তাকে সূত্র ধরে সংবাদও প্রকাশ করে বেশ কিছু মূলধারার গণমাধ্যম। তবে পরে তথ্য যাচাইয়ে দেখা যায় আইডিটি জাকারবার্গের আসল অ্যাকাউন্ট নয়, সেটি একটি প্যারডি অ্যাকাউন্ট।