বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করেছে। এতে সুদের হার আরও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, সুদের হারকে ‘রেপো রেট’ বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদের হারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিয়ে থাকে তাকে পলিসি রেট বা রেপো রেট বলা হয়। রেপো রেট বেড়ে যাওয়ায় ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এমন এক সময়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলো যখন মূল্যস্ফীতি ও বিদেশি মুদ্রা সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে আছে। এর সঙ্গে নতুন করে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লোহিত সাগরের সংকট।
এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমলেও অসুবিধা নেই মন্তব্য করে সভায় গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বরাবর অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা রয়েছে। তবে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্য বিষয়গুলো দেখার বিষয়ে নতুন অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে না নামা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে এই মুদ্রানীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তারা, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালকসহ অনেকে।
গত বছর ব্যাংক ঋণ হার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়নি। স্রেফ সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা অনেকের মনেই প্রশ্ন।
গত ছয় মাসে দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি জানুয়ারিতে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশে। সে সময়ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছিল। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে দেখা যায়নি।
অর্থনীতিবিদদের মতে কেবল সুদহার বাড়িয়ে-কমিয়ে দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ অর্থনৈতিক অন্য সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে হলে সংস্কার দরকার। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর সুপারভিশন জরুরী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অর্থনীতির সংকট কাটাতে মূল্যস্ফীতিসহ দেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাছাড়া নীতি সুদহার বাড়ানোয় ব্যাংকগুলো এখন ঋণের সুদহার বাড়াবে। ফলে অর্থ সরবরাহ আরো সংকুচিত হবে। এতে ব্যাংকগুলো ঋণপ্রবাহ আরো কমে আসবে। উচ্চ সুদহারের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। এতে কর্মসংস্থান আরও কমার আশঙ্কা প্রকট হবে।
কেবল ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোর মধ্যেই সব সমস্যার সমাধান দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমনটাই দাবি করে অর্থনীতিবিদরা বলেন, সেটা যে তেমন সাফল্য আনতে পারেনি মূল্যস্ফীতির লাগামহীন অবস্থাতেই তা স্পষ্ট আমাদের কাছে।
তারা বলেন, সুদহার বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দেয় কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে। এতে উদাহরণ হিসেবে দাঁড়করান ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। যেখানে মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল এক সময়। তখন তারা তাদের সুদের হার বেঁধে রাখেনি। তারা আরো বিচক্ষণতার সঙ্গে মুদ্রানীতি ব্যবহার করেছে।