আজকাল ই-কমার্স সাইটগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় বেশ কিছু ব্যক্তি লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে পণ্যের ব্যবহার ও গুণগত মান নিয়ে কথা বলছেন। একই সঙ্গে দর্শকদের প্রশ্নেরও জবাব দিচ্ছেন বা লাইভ চলাকালে অর্ডার করলে ছাড়ের জন্য দিচ্ছেন কোড। তারা কোনো একক ব্র্যান্ডের পরিচয়ে নয়, বরং নিজস্ব নামেই এ লাইভস্ট্রিমগুলো করে থাকেন। একাধিক ব্র্যান্ডের পণ্য ও সেবা নিয়ে বাজারজাতকারীরা কাজ করে থাকেন, যেহেতু একক ব্র্যান্ডের ব্যানারে তাঁরা কাজ করেন না।
আবার এসব ভিডিও নানাবিধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফরমেও দেখা যায়। ব্যাবসায়িক নয়, বরং ব্যক্তিগত এসব অ্যাকাউন্টে এ ধরনের ভিডিও ছাড়াও কিছু কিছু দৈনন্দিন জীবনের পোস্ট দেখা যায়। ফলে মনে হতেই পারে, এসব অ্যাকাউন্টের মালিকরা কমিশনের বিনিময় হয়তো ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ হিসেবে ফলোয়ারদের মধ্যে ব্র্যান্ডগুলোর মার্কেটিং করছেন, কিন্তু সেটা কোনো চাকরি নয়। অন্তত তাদের ভিডিওগুলো নিজের রুমে বা বাসায় ধারণ করা।
এই নতুন যুগের ইনফ্লুয়েন্সার কালচারের বাস্তবতা অবশ্য খুবই ভিন্ন।
বেশ কয়েক বছর ধরেই চীনে অবস্থিত ‘ইনফ্লুয়েন্সার কারখানা’র ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গেছে। বড়সড় গোডাউনের ভেতর ছোট ছোট তাঁবুর মতো লাইটিংসমৃদ্ধ স্টেজে ১০ থেকে ৪০ জন ইনফ্লুয়েন্সার সারা দিন নানা পণ্যের বর্ণনা নিয়ে লাইভ স্ট্রিম করছেন, তৈরি করছেন টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের জন্য ভিডিও। দিনশেষে ই-কমার্স প্ল্যাটফরমগুলো তাদের বেতন-ভাতা ও বিক্রির ওপর কমিশন দিচ্ছে।
আর দশটি মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে এখানেই তফাত। এসব মানুষ প্ল্যাটফরমগুলোতে তাদের জীবনের এক ভুয়া চিত্র তুলে ধরছেন খদ্দের ধরার জন্য। আর এ জিনিসটি ইলেকট্রনিকসের চেয়ে খাবার, পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট এবং মেকআপের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। অনলাইনে লাখো ফলোয়ার আছে এমন এক নারী তাঁর ফলোয়ারদের হয়তো বলছেন একটি ব্র্যান্ডের জিনিস প্রতিদিন ব্যবহার করে তার বাকি সব ব্র্যান্ডের চেয়ে মানসম্মত মনে হয়েছে, অথচ তিনি হয়তো কথাটি বলার জন্য ভাতা পাচ্ছেন। আদতে সেটি তিনি নিজে ব্যবহারই করেন না।
পুরো জিনিসটাকেই ডিস্টোপিয়ান কল্পকাহিনির সঙ্গে তুলনা করেছেন সামাজিক পরিবর্তন গবেষকরা।
সম্প্রতি আবারও ‘ইনফ্লুয়েন্সার কারখানা’র ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এবার চীন নয়, পটভূমি ইন্দোনেশিয়া। তবে মার্কেটিং গবেষকরা বলছেন, তাঁদের কাছে প্রমাণিত না হলেও তথ্য আছে যে এমন কারখানা ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার আরো কিছু দেশ, এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে। তবে ইউরোপে বিষয়টি এখনো অতটা চালু হয়নি। কেননা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেনাকাটার পরিমাণ এখনো সেসব দেশে কম।
এ ধরনের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি একেবারে নতুন, তা নয়। আগে রিয়ালিটি শোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদের পণ্য সেসব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রচার করত। এ ছাড়া আন্ডারকভার মার্কেটিং এজেন্টরা বিভিন্ন স্থানে বসে আড্ডা দেওয়ার ছলে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সুনাম ছড়িয়ে দিয়েছেন এমন নজিরও রয়েছে। ধীরে ধীরে ভিডিও রিভিউ এবং লাইভস্ট্রিম জনপ্রিয় হওয়ায় আজ কল সেন্টার থেকে কোল্ড কল দেওয়ার বদলে ই-কমার্স প্ল্যাটফরমগুলো তাদের কর্মীদের দিয়ে তৈরি করছে পণ্যের রিভিউ ভিডিও।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a1%e0%a6%bf%e0%a6%93-%e0%a6%8f%e0%a6%a1%e0%a6%bf%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%82-%e0%a6%86%e0%a6%aa%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ac/
ক্রেতা হিসেবে করণীয় একটাই, ইনফ্লুয়েন্সারদের অভিজ্ঞতাকে সাধারণ ক্রেতার পরামর্শ বা মতামত হিসেবে না নিয়ে, ব্র্যান্ডগুলোর মার্কেটিং বুলি মাত্র—এই চিন্তা মাথায় রেখে এরপর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া।