শাড়ির সৌন্দর্যেই নিজেদের নানা সময়ে মেলে ধরেছেন অভিনেত্রীরা। টলিউড থেকে বলিউড, সব অভিনেত্রীদেরই এক একটি শাড়ি লুক অসাধারণ। ঐশ্বর্য রাই বচ্চন থেকে শুরু করে রাইমা সেন বা মৌনী রায়, বিনা ব্লাউজে শাড়ি পরে যেভাবে তাক লাগিয়েছেন, তা প্রশংসা করার মতোই। এক একটি ছবি দেখার মতো। রইল সেসব লুকের ঝলক। মিস করবেন না।
আজকাল সবাই ফ্যাশনেবল থাকার চেষ্টা করেন। সবাই নিজের স্টাইলিং নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক। তাঁরা চান যে, ড্রেসিং যেন সব সময়ই ঠিক থাকে। দুর্দান্ত দেখায় তাঁদের। সেই জন্য তারকাদের দিকে সব সময়ই নজর থাকে। তাঁরা বড় পর্দায় কী ধরনের পোশাক পরছেন, কীভাবে স্টাইলিং করছেন, সেসব দিকেই নজর থাকে।
এছাড়াও রিল লাইফ বাদ দিয়ে রিয়েল লাইফেও তাঁরা যেভাবে নিজেদের সাজিয়ে রাখেন, যে ধরনের আউটফিট ক্যারি করেন, তাঁর দিকেও নজর থাকে সবার। এই কারণেই বলিউড সুন্দরীদের কথা যখন আসে, তখন সবার প্রত্যাশা অনেকটাই বেড়ে যায়। আর সেজন্যই তো সাধারণ মানুষ তাঁদের লুক সব সময় কপি করতে চান! ঐশ্বর্য রাই বচ্চন থেকে শুরু করে আরও অনেকেই…
ঐশ্বর্য রাই বচ্চন
ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘চোখের বালি’ ছবিতে ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের যে লুক ডিজাইন করা হয়েছিল, তা সব সময়ই প্রশংসা করার মতো। সেই সময় প্রাক্তন বিশ্ব সুন্দরীকে ঋতুপর্ণ যেভাবে বড় পর্দায় পোর্ট্রে করেছিলেন, তা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সবাই।
এই ছবিতে বিনোদিনীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ঐশ্বর্য রাই। রবীন্দ্রনাথের নায়িকাকে ঠিক যেমনটা বর্ণনা করা হয়েছিল, সেভাবেই সেজেছিলেন বিনোদিনী। এই ছবিতে যে সময়টাকে ধরা হয়েছিল, সেই সময়ে ব্লাউজ পরার রীতি ছিল না। তাই ঐশ্বর্য রাইয়ের চরিত্র অনুযায়ীই সাজানো হয়েছিল তাঁকে। তাঁর লুক ডিজাইন করেছিলেন জয় মিত্র।
রাইমা সেন
এই একই ছবিতে আশালতার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রাইমা সেন। আশালতার লুকটাও ছিল দেখার মতোই। আশালতার ভূমিকায় চমৎকার লাগছিল রাইমাকে। তাঁর দিক যেন চোখ ফেরানোর কোনও উপায় ছিলই না। আমরা তো ঐশ্বর্য ও রাইমাকে দেখেই যাচ্ছিলাম। রাইমা সেনকে বাঙালি আটপৌরে ড্রেপিং করানো হত। সুন্দর দেখাত তাঁকে। নাকে নথ পরিয়ে সম্পূর্ণ লুকই বদলে দেওয়া হয়েছিল রাইমার। হাত খোঁপায় কী সুন্দর দেখাচ্ছিল। সেখান রাইমার লুকটিও ছিল বাঙালি আচারের উপর ভিত্তি করেই। ব্লাউজ ছাড়াই শাড়ি পরেছিলেন তিনি। আবার তাঁকে ব্লাউজ পরতেও দেখা যায় এই শাড়িতে।
চোখের বালির এই দুই লুক বাদ দিলেও একাধিক অভিনেত্রী এরকমভাবে শাড়ি পরেছেন। যাঁরা ব্লাউজ পরেননি, শুধুমাত্র শাড়ি পরেই চমকে দিয়েছেন সবাইকে। (ছবি- ইনস্টাগ্রাম @raimasen)
মৌনী রায়
ঐশ্বর্য রাই, রাইমা সেনের মতোও মৌনী রায়ও বিনা ব্লাউজে শাড়ি পরে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। সেই লুকে চমৎকার দেখাচ্ছিল মৌনী রায়কে। আমরা তাঁর সেই ফটোশ্যুট দেখে চমকে গিয়েছিলাম। এতটাই অবাক করা সুন্দর দেখাচ্ছিল অভিনেত্রীকে। আসলে নিজের বিয়ের কয়েকদিন আগে বাড়ির ছাদে একটি ফটোশ্যুট করেন মৌনী। যার জন্য তিনি একটি সবুজ সিল্কের শাড়ি পরেছিলেন। শাড়িতে সোনালি জরির কাজের ফুলের প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছিল, যার সঙ্গে ছিল মানানসই ভারী কারুকাজ করা পাড়।
তাঁর লুকে বোল্ড এলিমেন্ট যোগ করার জন্য মৌনি শাড়িটি ব্লাউজ ছাড়াই ড্রেপ করেছিলেন। তাঁর ব্যাক ডিটেলিং ফ্লন্ট করেছিলেন। এই লুক সম্পূর্ণ করতে মৌনী সোনালি এবং সবুজ স্টেটমেন্ট কানের দুল পরেছিলেন।
মীরা রাজপুত কাপুর
শাহিদ কাপুরের স্ত্রী মীরা রাজপুত কাপুর। তাঁকে এক ডাকেই সবাই চেনেন। তাঁর হটনেসে পাগল হয়ে টুপটাপ প্রেমে পড়েন অনুরাগীরা। ব্লাউজ ছাড়াই শাড়ি পরে আঁচল কাঁধে রেখেছিলেন মীরা। যা দেখে সবার তাক লেগে গিয়েছিল। আসলে, ভারতীয় বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার জয়ন্তী রেড্ডি তাঁর ২০২২ কালেকশন উপস্থাপন করার জন্য মীরাকেই মিউজ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এই লুকের জন্য মীরা একটি ডাস্টি রোজ পিংক রঙের শাড়ি পরেছিলেন।
শাড়ি তৈরিতে সম্পূর্ণভাবে সিল্কের মতো সমৃদ্ধ ফ্যাব্রিক ব্যবহার করা হয়েছিল। যার উপর সিলভার জরদৌজি দিয়ে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করা হয়েছিল। শাড়িতে কোনও ভারী কাজ ছিল না, তবে এর হেমলাইনে একটি রয়্যাল এফেক্ট যোগ করা হয়েছে। মীরা রাজপুত এই স্টেটমেন্ট পিসটির সঙ্গে কোনও ধরনের ব্লাউজ পরেননি। যা এই লুককে আরও বেশি বোল্ড টাচ দিয়েছে।
কীভাবে শুরু হল এই বিনা ব্লাউজের ফ্যাশন?
আসলে কয়েক শতাব্দী আগেও শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ পরার রীতি ছিল না। আসলে ব্লাউজ বা জ্যাকেটের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না তাঁরা। তাই যে ধরনের শাড়ি পরা হত, তাঁর সঙ্গে কখনও ব্লাউজ বা জ্যাকেট পরেননি তাঁরা। সেই সময়ে মহিলারা কী ধরনের শাড়ি পরতেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সাহিত্যে ও সিনেমায়। পুরনো ছবি থেকেও সেই আন্দাজ করা যায়। সেই সময়ে ব্রিটিশ রাজত্ব চলছিল।
ব্রিটিশ মহিলারা কিন্তু অন্যরকম পোশাক পরতেন। ধীরে ধীরে ভারতীয় মহিলারাও এই জ্যাকেট বা পরবর্তীতে ব্লাউজকে নিজেদের ফ্যাশনের অন্তর্ভুক্ত করেন। ঠাকুরবাড়ির মহিলারা শাড়ি পরার রীতিকে পরিবর্তন করেন। আটপৌরে ড্রেপিংয়ের পরিবর্তে অন্য ধরনের ড্রেপিংও দেখা যায়। নিজেদের সাজকে সম্পূর্ণ বদলে নিয়েছিলেন। এমনকী ঠাকুরবাড়ির সদস্য জ্ঞানদানন্দিনী দেবীই ব্লাউজ পরার রীতিকেও নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ পরার রীতি শুরু হয়।
কিন্তু এখন কোনও কোনও ছবিতে পুরনো সময়কে এস্টাব্লিশ করার জন্য সেভাবে শাড়ি ড্রেপিং করানো হয়। এছাড়া কোনও ফটোশ্যুটে বিশেষ বোল্ড লুক তৈরি করার জন্যেও বিনা ব্লাউজে শাড়ি ড্রেপ করা হয়।