ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে সহজ আর দ্রুত কাজ করে সূর্যস্নান। নিয়মিত বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ১৫ মিনিট সূর্যস্নান করা গেলে শরীরের ৭০ ভাগ ভিটামিন ডি-র চাহিদাই পূরণ হয়ে যায়। ভিটামিন ডি সবারই প্রয়োজন। তবে সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশে বেশির ভাগ নাগরিকের দেহে এই ভিটামিনের ঘাটতি রয়েছে। ভিটামিন ডি-এর ভূমিকা হলো—
– ভিটামিন ডি-এর অভাবে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি, বিষণ্নতা বোধসহ বারবার অসুস্থতা দেখা দেয়।
– শিশুদের হাড় ও দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন ডি-এর অভাবে শিশুদের পায়ের হাড় বেঁকে যাওয়া রোগ রিকেট হতে পারে।
– হাড়ের অন্যান্য রোগ, যেমন : অস্টিওপরোসিস, অস্টিওম্যালাসিয়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হতে পারে।
– শরীরের ফসফেট নিয়ন্ত্রণ করে। সুস্থ পেশির জন্যেও এটি দরকার।
– নার্ভ সিস্টেম উন্নত করা ও মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বেশ ভূমিকা রাখে।
– যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
– ইনফ্ল্যামেটরি বাউয়েল ডিজিজ, স্থূলতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
– মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। নিদ্রাচক্র বজায় রাখতে এই মেলাটোনিনের প্রয়োজন।
– গবেষণা বলছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে ভিটামিন ডি।
সূর্যই প্রধান উৎস
অন্য সব ভিটামিন খাবারে নিয়মিত পাওয়া গেলেও ভিটামিন ডি-এর মূল উৎস সূর্যের আলো। বলা হয়, দেহের মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে।
মূলত ত্বকের অভ্যন্তরে রয়েছে কোলেস্টেরল। এই কোলেস্টেরলের ওপর পড়ে সূর্যরশ্মি। এরপর তৈরি হয় ভিটামিন ডি। আর এই ভিটামিন সরাসরি শরীর গ্রহণ করে।
সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি পাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো যখন সূর্য আকাশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে অবস্থান করে তখন। সাধারণত এই সময়টি ধরা হয় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে।
নিয়মাবলি
– দেহের যত বেশি অংশ রোদে খোলা রাখা যাবে, তত বেশি ভিটামিন ডি মিলবে। তাই রোদে থাকার সময় হাত, বাহু, পা, মুখ, পিঠ, গলা ইত্যাদি অংশ খোলা রেখে হালকা পোশাক পরিধান করা ভালো।
– ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থাকা উচিত। তবে গরমকালে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট-ই যথেষ্ট।
– রোদ লাগানোর সময় কোনো ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন না।
সাবধানতা
সূর্যের আলোতে থাকে অতিবেগুনি রশ্মি। তাই বেশিক্ষণ থাকলে এই রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে বা ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে অথবা ত্বকের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার
১. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে প্রথমেই যে খাবারটির কথা বলা যায় সেটি হলো ডিম। এটি ভিটামিন ডি-র একটি উৎকৃষ্ট উৎস।
২. দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। খাবারের ছয়টি উপাদানের পাশাপাশি গরুর দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা শিশুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. সহজে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণে ডায়েটে রাখতে পারেন দইও। পেটের সুরক্ষায় আর গরম থেকে স্বস্তি পেতে নিয়মিত শিশুকে দই খাওয়ানো উচিত।
৪. ভিটামিন ডি-র জন্য প্রতিদিন একটি কমলাও খেতে পারেন। এতে একই সঙ্গে ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
৫. অতি বেগুনি রশ্মিতে রাখলে মাশরুম ভিটামিন ডি তৈরি করে। এটি একমাত্র অপ্রাণিজ খাদ্য যেখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি মেলে।
৬. ফ্যাটি ফিশ যেমন: টুনা, ম্যাকরেল, স্যালমন সামুদ্রিক জাতীয় মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।
৭. কড লিভার অয়েল বা মাছের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, ওমেগা থ্রি এবং ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণ করার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ রাখে আপনার হার্টকেও।