সংযুক্ত আরব আমিরাতে একের পর এক বিস্ময়কর স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। বছর জুড়ে এই দেশে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। এখানে রয়েছে– বুর্জ খলিফা, দুবাই ফাউন্টেন, দুবাই মল, বুর্জ আল আরব জুমেইরাহসহ আরও অনেক কিছু। এর পাশাপাশি আপনি চাইলে পরিত্যক্ত একটি মরুভূমি থেকেও ঘুরে আসতে পারবেন। দুবাইয়ের আকাশচুম্বী ভবন থেকে মাত্র এক ঘণ্টার পথ।
১৯৭০-এর দশকে আধা-যাযাবর বেদুইনদের থাকার জন্য নির্মিত হয়েছিল এই গ্রামটি। এর নাম আল-ঘুরাইফা। গ্রামটি প্রায় দুই দশক পরে পরিত্যক্ত হয়েছিল। কারণ তেল–সম্পদ দেশটিকে বাণিজ্য ও পর্যটনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, শারজাহ আমিরাতের আল-মাদাম শহরের কাছে ভূতের গ্রামটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয় ওঠেছে। এই জায়গাটি আপনাকে শহরগুলোর কংক্রিটের জঙ্গল থেকে বের করে নিয়ে আসবে। গ্রামটি আমিরাতের কঠিন অতীতের একটি আভাস দেয়। দুই সারি বাড়ি এবং একটি মসজিদ নিয়ে গঠিত গ্রামটি।
শারজাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক আহমেদ সুক্কার, আল-ঘুরাইফা সাইটটি নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর মতে, ‘এই জায়গাটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আধুনিক ইতিহাসের অনেক কিছু শেখাতে পারে।’
সুক্কার আরও জানান, গ্রামে আল-কেতবি উপজাতির প্রায় ১০০ জন সদস্য ছিল। তারা বেশ কয়েকটি বেদুইন উপজাতির মধ্যে একটি ছিল। যারা তখন পর্যন্ত একটি আধা-যাযাবর অস্তিত্বের নেতৃত্ব দিয়েছিল। তার প্রাণী লালন-পালন করত। মরুভূমির মধ্যে ভ্রমণ করেছিল। তারা মূলত মাছ ধরে জীবকা নির্বাহ করত। আল-কেতবি উপজাতিরা দুবাই এবং আবুধাবিতে বেড়াতেও গিয়েছিল।
আল-ঘুরাইফা গ্রামের ঘরগুলো আধুনিক সিমেন্টের তৈরি ছিল। এর ভিতরের দেয়ালগুলো উজ্জ্বল রঙের ছিল। মোজাইক দিয়ে সাজানো ছিল। এখানকার বাড়িগুলোতে এমন জায়গাও রয়েছে, যেখানে গ্রামের প্রবীণরা কাউন্সিলিং করতে পারত, যা আরবিতে ‘মাজালিস’ নামে পরিচিত। বাড়িগুলো তৈরি হওয়ার মাত্র দুই দশক পর ঠিক কী কারণে এরা দেশত্যাগ করে তাঁর সূত্রপাত এখনও স্পষ্ট নয়।
সুক্কারের মতে, সম্ভবত এখানকার বাসিন্দারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলোতে একটি উন্নত জীবন পেতে চলে গিয়েছে। গ্রামে বিদ্যুৎ এবং পানির কষ্ট ছিল। বালির ঝড় দ্বারা বিধ্বস্ত ছিল তাদের জীবন। দুবাইতে সরকারি চাকরি এবং স্কুলে পৌঁছানোর জন্য এখনাকার পরিবারগুলো হয়তো গ্রাম ত্যাগ করেন।
অন্যদিকে অনেকের ধারণা, এখানকার বাসিন্দাদের খারাপ আত্মার দ্বারা তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আল-ঘুরাইফা গ্রামটির সব কিছু ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। অনেক বাড়িগর মরুভূমির বালির নীচে চলে গিয়েছে। তবে, পার্শ্ববর্তী শহর আল-মাদামের রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের নিয়মিত ঝাড়ু দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র মসজিদটি আগের মতোই রয়ে গেছে।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%aa%e0%a6%9b%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%b7%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a6%ab-2/
আজকাল, ট্যুর গাইডরা পরিত্যক্ত গ্রাম আল-ঘুরাইফার মধ্য দিয়ে দর্শনার্থীদের নিয়ে যায়। এই সাইট পরিদর্শনকারী একজন ভারতীয় প্রবাসী নিতিন পাঞ্চাল বলেন, ‘আমি ভাবছি তারা কেন চলে গেছে। এর কারণ, কালো জাদু হতে পারে কিনা তাই ভাবছি। হয়তো এদের চলে যাওয়ার কারণ কখনই জানতে পারব না।’
এখানে আসা দর্শনার্থীরা গ্রাফিতি দেখে মুগ্ধ হন। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জায়গাটি।