বিশ্বজুড়ে এখন নিরামিষ (Vegetarian Diet) খাবারে রুচি বাড়ছে। ভেজিটেরিয়ান ডায়েট বা ভেগান ডায়েটের চাহিদা এখন খুবই বেশি।
বাঙালির শরীর–মন পুষ্ট হয় মাছে–ভাতে৷ আজকাল স্বাস্থ্যের খাতিরে কেউ কেউ নিরামিষ খাওয়া ধরেছেন, বিশেষ করে বেশি বয়সে৷ কেউ নিরামিষ খান শখে, কেউ প্রাচীন প্রচলিত সংস্কার মেনে বা তিথি–পার্বণে৷ কিন্তু এখনকার সময় স্বাস্থ্যের জন্যই নিরামিষ ডায়েটের দিকে ঝোঁক বাড়ছে মানুষজনের। পুষ্টিবিদরা বলছেন, এক জন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক নারী ও পুরুষ দৈনিক যথাক্রমে ৫০-৬০ গ্রাম এবং ৭০-৮০ গ্রাম প্রোটিন খেতেই পারেন। আবার ওজন কম থাকার সমস্যা থাকলেও অনেকে নিয়ম করে প্রোটিন খেতে বলেন। এখন প্রোটিনের কথা বললেই মাছ-মাংস-ডিমের কথা মাথায় আসা স্বাভাবিক। কিন্তু যাঁরা নিরামিষ খান তাঁদের জন্য ডায়েট (Vegetarian diet) অন্যরকম হবে। ভেগান হলে আবার প্রাণিদুগ্ধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়া চলে না, তাই মূলত আনাজপাতির প্রোটিনের উপরেই ভরসা রাখতে হবে। এমন অনেক আনাজপাতি আছে, যা প্রোটিনে ভরপুর।
ওবেসিটি, ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ, হাইপ্রেশার, ডায়াবেটিস ও কিছু ক্যানসারের আশঙ্কা কমে যায় নিরামিষ ডায়েটে। প্রোটিনের বাড়াবাড়ি থাকে না বলে কিডনির জন্য ভাল। ‘খাই খাই করো কেন এস বসো আহারে/ খাওয়াব আজব খাওয়া ভোজ কয় যাহারে’… ডায়েট মানলে ‘ডাল ভাত তরকারি ফলমূল শস্য’ খেলে ঠিক আছে কিন্তু ‘চর্ব্য ও চোষ্য’ একেবারেই বাদ দিতে হবে।
নিরামিষাশীদের কী কী রাখতেই হবে ডায়েটে?
সয় প্রোটিন: সয় প্রোটিন জিএমও প্রডাক্ট। অর্থাৎ জেনেটিকালি মডিফায়েড। তাই সপ্তাহে এক দিন খেতে পারেন। কিন্তু প্রত্যেক দিন বেশি পরিমাণে সয় প্রোটিন গ্রহণ করা ঠিক নয়। এক কাপ সয়াবিনে ৮.৫ গ্রাম এবং আধ কাপ টোফুতে পাবেন ১০ গ্রাম প্রোটিন।
ডাল: ডাল প্রত্যেক ভারতীয় রান্নাঘরের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আর সব রকম ডালেই প্রোটিন থাকে বলে বিশেষজ্ঞরা আমাদের জানান। বিশেষ করে মুসুর ডালে প্রোটিনের মাত্রা যথেষ্ট। এ ছাড়াও মুগ, ছোলা, অড়হর, বিউলি প্রভ়়ৃতি সব ডালেই থাকে আবশ্যক প্রোটিন।
ওটস: স্বাস্থ্যসচেতন সব মানুষই ইদানীং ওটস নামক খাবারটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। কিন্তু ওটসে পুষ্টিগুণের পাশাপাশি এর মধ্যে থাকা প্রোটিন দেহের জন্য বিশেষ উপকারি। আমিষ খাবার খান না এমন মানুষজনের ডায়েটে নিয়মিত ওট রাখা তাই অত্যন্ত জরুরী।
দানাশস্য: ছোলা, রাজমা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। কিন্তু তা হজম করতেও বেশ সময় লাগে। তাই এই ধরনের খাবার ভাল ভাবে সিদ্ধ করে খেতে পারেন। ছোলা দিয়ে তৈরি হামাস জনপ্রিয় খাবার। এই ধরনের খাবার খেতে পারেন ব্রেডের সঙ্গে।
সবুজ আনাজপাতি: অ্যাসপারাগাস, ব্রকোলি, পালং শাক, অ্যাভোকাডো ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম ব্রকোলি, অ্যাসপারাগাস ও অ্যাভোকাডোয় ৩.৫ গ্রাম প্রোটিন পেতে পারেন।
বাদাম: কাঠবাদাম বা আমন্ডে প্রোটিন পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। বিকেলে হেলদি স্ন্যাকস হিসেবে রাখাই যায় এই ধরনের বাদাম। তা ছাড়া খাবারেও বাদাম বাটা বা পাউরুটিতে পিনাট বাটার স্প্রেড খেতে পারেন।
জরুরি টিপস: খাদ্যতালিকায় খোসাওয়ালা ডাল, ব্রাউন ব্রেড, ব্রাউন রাইস, টাটকা ও শুকনো বিন, রাজমা, ছোলা, মটর, সোয়াবিন, রঙিন শাক–সব্জি, বাদাম, সবজির বীজ, দুধ, দই, ছানা, ইত্যাদি রাখুন৷ বিন, পালং, আয়রন ফর্টিফায়েড খাবার, শুকনো ফল খেলে রক্তাল্পতা কম হবে৷ ভাতের পাতে লেবু বা মূল খাবার খাওয়ার পর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কোনও ফল, যেমন, আমলকি, পেয়ারা, কমলা, সবেদা ইত্যাদি খেলে খাবারের আয়রন সহজে ঢুকবে শরীরে৷
ব্রেন অ্যানিউরিজমে মৃত্যু ৩০ বছর বয়সি বডিবিল্ডারের, কী এই রোগ সুঠাম শরীরেও বাসা বাঁধল!
ক্যালসিয়ামের জোগান পেতে দুধ, সয়াবিন, ডাল, খেঁজুর, ব্রকোলি, পালং ইত্যাদির সঙ্গে খান ঘরোয়া সুষম খাবার৷ শরীরের বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে জিঙ্কের ভূমিকা বিরাট৷ চাল, ডাল, আটা, বাদাম, সয়াবিন ইত্যাদি খেলে শরীরে তার ঘাটতি মিটবে।
প্রতিদিন খাবার পাতে ৪০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট রাখতে হবে। তবে হ্যাঁ, সাদা ভাতের চেয়ে যেহেতু লাল চালের ভাত, ওটস বা জোয়ার-বাজরা জটিল কার্বোহাইড্রেট তাই এগুলিকে প্রসেস করতে শরীরেরও বেশি সময় লাগবে। রাতের দিকে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণটা কমিয়ে দিন। অল্প করে সাদা ভাত শরীরে ক্ষতি করে না। তবে ডায়াবেটিস বা অন্য রোগ থাকলে ব্রাউন রাইসও খেতে পারেন। সুষম ডায়েট বা ব্যালান্সড ডায়েটে শরীর-রসনাকে বঞ্চিত করে কিছু করা হয় না। সবই খান কিন্তু মেপে আর সময় বুঝে।