সফলভাবে প্রথমবারের মতো মানুষের মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করেছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক। রোববার এ চিপ স্থাপন করা হয় বলে এক্সের (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানিয়েছেন মাস্ক নিজেই। খবর বিবিসির।
ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, মানব মস্তিষ্কে চিপ প্রতিস্থাপনের পর প্রাথমিক ফলাফল অনুসারে, চিপটি নিউরনের স্পাইক শনাক্তকরণে বেশ ভালো সক্ষমতা দেখিয়েছে।
মূলত, মানুষের মস্তিষ্ক যে বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে সারা দেহে তথ্য আদান-প্রদান করে সেই প্রক্রিয়াকে স্পাইক বলা হয়। এই চিপ স্থাপনের মধ্য দিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও স্নায়বিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মেচিত হলো।
ইলন মাস্কের কোম্পানি নিউরালিংক জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো সফলভাবে ওয়্যারলেস ব্রেইন চিপ মানুষের মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করেছে তারা। প্রাথমিক ফলাফলে আশাজনক নিউরন স্পাইক বা স্নায়ু আবেগ শনাক্ত হয়েছে এবং রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন।
নিউরালিংকের লক্ষ্য মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং জটিল স্নায়বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহায়তা করা। এর মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও অনুরূপ ডিভাইস তৈরি করেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য নিউরালিংক এবং যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি। এফডিএ জানায়, গত মে মাসে তারা মাস্কের কোম্পানিকে মানুষের ওপর এই চিপ পরীক্ষার অনুমতি দেয়।
নিউরালিংক ছয় বছরের একটি গবেষণা শুরু করার অনুমোদন পেয়েছে যেখানে একটি রোবট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের একটি অংশে মানুষের চুলের থেকেও সূক্ষ্ম ৬৪টি পাতলা সুতা (থ্রেড) প্রবেশ করাবে। ওয়্যারলেস চার্জযোগ্য ব্যাটারি দ্বারা চালিত এই থ্রেডগুলো মস্তিষ্কের ইমপ্লান্টে পরীক্ষামূলক সংকেত রেকর্ড করতে এবং প্রেরণ করতে পারে। ইমপ্ল্যান্ট থেকে প্রাপ্ত সংকেতগুলো পরে একটি সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনে যায় এবং তা নির্ণয় করে একজন মানুষ কীভাবে চলাচল করে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার) এর মালিক ইলন মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, নিউরালিংকের প্রথম পণ্যটির নাম হবে ‘টেলিপ্যাথি’। এই প্রযুক্তির লক্ষ্য, ব্যবহারকারীদের তাদের চিন্তাভাবনার মাধ্যমে ফোন বা কম্পিউটারের মতো ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দেওয়া।
মূলত মাস্ক এমন একটি ভবিষ্যতের কল্পনা করেছেন, যেখানে স্টিফেন হকিংয়ের মতো মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা টাইপিংয়ের মতো প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে আরও দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবেন।
এছাড়া, নিউরালিংকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কোম্পানি ‘প্রিসিশন নিউরোসায়েন্স’ পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করার জন্য কাজ করছে। তাদের ইমপ্লান্টটি দেখতে টেপের একটি পাতলা টুকরোর মতো এবং ‘ক্রেনিয়াল মাইক্রো-স্লিট’ নামে একটি সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে মস্তিষ্কের পৃষ্ঠে স্থাপন করা হয়।