বলা হচ্ছে, মেটাভার্সই হবে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ। মেটাভার্সের কারণে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগৎ মনে হবে বাস্তব জগতের মতো, যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। মেটাভার্স প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি কোন কিছু শুধু দেখতেই পাবেন না, তাতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতেও সক্ষম হবেন।
সাধারণ মানুষের কাছে মেটাভার্স প্রযুক্তিকে আপাতত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর-এর কোন সংস্করণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি আসলে তার চেয়েও অনেক বেশি। প্রযুক্তিবিদদের মতে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঙ্গে মেটাভার্সের তুলনা আজকের দিনের স্মার্ট-ফোনের সঙ্গে আশির দশকের মোবাইল ফোনের তুলনা করার মতো।
বর্তমানে ভিআর বেশিভাগ ক্ষেত্রে অনলাইন গেমিং-এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু মেটাভার্সের ব্যবহার হবে সকল বিষয়ে- অফিসের কাজ থেকে শুরু করে খেলা, কনসার্ট, সিনেমা, এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার বেলাতেও।
শুধুমাত্র হেডসেট লাগিয়েই ঢুকে পড়া যাবে ভার্চুয়াল জগতে।
নিজস্ব থ্রিডি অবতার প্রতিনিধি
অনেকে কল্পনা করছেন যে এই মেটাভার্স প্রযুক্তিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর নিজের একটি থ্রিডি অবতার বা চরিত্র থাকবে এবং এটিই অনলাইনে তার প্রতিনিধিত্ব করবে। অর্থাৎ এটি ঘুরে ফিরে বেড়াতে পারবে এবং অন্যান্য চরিত্রের সঙ্গে নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে।
বলা যেতে পারে যে মেটাভার্স প্রযুক্তিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ‘শেয়ার্ড ভার্চুয়াল পরিবেশে’ প্রবেশ করা যাবে। অর্থাৎ এটি হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে ব্যবহার করে তৈরি ডিজিটাল স্থান যেখানে ডিজিটাল বিশ্বকে বাস্তব দুনিয়ার সাথে মিলিয়ে দেওয়া হবে।
গুগল ম্যাপে যখন কোন রাস্তা দিয়ে যান, স্ট্রিট ভিউতে আপনি আশেপাশের গাড়ি-বাড়ি-দোকানপাট সব দেখতে পান। আমি চাইলে ঢাকায় বসে লন্ডনের রাস্তা দেখতে পারবো। এ পর্যন্ত কিন্তু হয়ে গেছে। এটা মেটাভার্সের শুরু। এর পরে যেটা হবে তা হচ্ছে এসব জায়গায় থাকার যে অভিজ্ঞতা সেটা আমি সেখানে না থেকেও ফিল করা যাবে। কম্পিউটারের সামনে বসে না থেকে একটি ভিআর হেডসেট লাগিয়েই আপনি আপনার প্রিয় ওয়েবসাইটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। পারবেন বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, গানের কনসার্টে যাওয়া, শপিং থেকে শুরু করে মোটামুটি সবকিছুই।
কেন এতো আলোচনা
ডিজিটাল পৃথিবী এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি নিয়ে মাঝে মধ্যেই জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়। আবার কিছুদিন পর সেই উত্তেজনা হারিয়েও যায়। তবে এবার প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলোর মধ্যে মেটাভার্স নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যেহেতু এই প্রযুক্তি ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠছে সে কারণে কেউ এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে চায় না।
এর কারণ এই প্রথমবারের মতো এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে প্রযুক্তিবিদরা মেটাভার্স প্রযুক্তি আবিষ্কারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। ভিআর গেমিং এবং ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতির কারণেই এই ধারণা তৈরি হয়েছে।
ফেসবুক যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সেই তালিকার উপরের দিকেই রয়েছে মেটাভার্স প্রযুক্তি। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রধান মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই তার প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
ইউরোপে এই মেটাভার্স প্রযুক্তি তৈরি করার জন্য ফেসবুক সম্প্রতি ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে। বিনিয়োগ করছে প্রচুর অর্থ। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জন্য তারা তৈরি করেছে অকুলাস হেডসেট যা প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর সেটের তুলনায় দামে কম। মেটাভার্সের জন্য ‘বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম এআই সুপার কম্পিউটার’ তৈরি করছে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকরপোরেশনের গবেষকরা।
মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগল, রোব্লক্স এবং ফোর্টনাইট নির্মাতা এপিক গেইমস কোম্পানিও মেটাভার্স তৈরিতে কাজ করছে। বিনিয়োগ করেছে প্রচুর অর্থ।
সম্প্রতি ফোর্টনাইটের এক ভার্চুয়াল কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আরিয়ানা গ্রান্ডে যাতে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে বলে এপিক গেইমসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আর কতো দূর?
গত কয়েক বছরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে। কিছু হেডসেট তৈরি হয়েছে যা মানুষের চোখের সঙ্গে এমন চালাকি করতে পারে যে আপনি যখন ভার্চুয়াল পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবেন তখন মনে হবে সবকিছু থ্রিডি-তে দেখতে পাচ্ছেন।
https://bangla-bnb.saturnwp.link/%e0%a6%86%e0%a6%ac%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%93%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%95%e0%a6%9f-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a8%e0%a7%aa-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%95/
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, মেটাভার্স প্রযুক্তি তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের গতি আরও দ্রুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে ফাইভ-জি বাজারে আসার পরেই, সব সমস্যার সমাধান ঘটবে। ১০ বছর আগে মেটাভার্স একটি ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে এটি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগামী সাত/আট বছর পরে দেখবেন যে আমরা মেটাভার্সের জগতে প্রবেশ করে ফেলেছি