ঘরের পরিবেশ আপনার সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী ও মেধা বিকাশে সাহায্য করে। মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে সন্তানকে গড়ে তোলায় বাড়ির পড়ার স্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি আরও কিছু বিষয় আছে যা সন্তানের মেধা বিকাশে বিশেষ প্রভাব ফেলে।
কাজ ও সময়ের সমন্বয়
সারা দিন ধরে সিনেমা দেখা কিংবা ৫ মিনিট পড়ালেখার পর ৫০ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া মোটেই ভালো অভ্যাস নয়। আমরা যে পুষ্টি গ্রহণ করি এবং যে শক্তি বিনিয়োগ করি তা খুবই মূল্যবান। তাই এগুলোর যথাযথ বিনিয়োগ করতে হবে। ভালো শিক্ষার্থী হতে অবশ্যই নিজের সময়কে সেরা ব্যবহার করতে হবে। ছাত্রজীবনে সিনেমা, আড্ডা সবই দরকার আছে। কিন্তু, পড়ালেখা সবার আগে। তাই কাজকে ছোট ছোট করে ভাগ করে সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। ভালো শিক্ষার্থীরা এটিই করে।
নিরিবিলি পড়ার রুম
পরিবারের সবার মধ্যে বসে কিন্তু পড়ায় মনোযোগী হওয়া যায় না। আবার আইসক্রিম ও পপকর্ন বিক্রেতার চিৎকার কানে এলেও মনোযোগ ধরে রাখা যায় না। কিন্তু, পড়া মনে রাখতে হলে সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একাগ্রহতা। তাই, ভালো শিক্ষার্থী হতে হলে অবশ্যই পড়ার জন্য নিরিবিলি রুম বেছে নিতে হবে। তাহলে কোনো গোলমাল বা শব্দ বিরক্ত করতে পারবে না।
প্রশ্ন করতে শেখা
শেখার সারাংশ হলো প্রশ্ন করতে পারা। ক্লাসরুমে অবশ্যই শিক্ষককে প্রশ্ন করতে হবে এবং ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ এটি। তাই মনে কোনো প্রশ্ন এলে বা কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করতে হবে। একজন ভালো শিক্ষার্থীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটি।
লক্ষ্য স্থির
একজন ভ্রমণকারীর যদি কোনো গন্তব্য না থাকে, তাহলে তিনি অযথা ঘুরবেন। একইভাবে একজন শিক্ষার্থীর যদি কোনো লক্ষ্য না তাকে তাহলে সে নিজেও বুঝতে পারবে না, তাকে কোথায় যেতে হবে। এ কারণে লক্ষ্য নির্ধারণ করা ভালো শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেধাবী ও ভালো শিক্ষার্থীরা সবসময় তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত থাকে।
সঠিক শেখার কৌশল ব্যবহার
ভালো শিক্ষার্থী হতে অবশ্যই শেখার জন্য সঠিক ও কার্যকর কৌশল মেনে চলতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, সঠিক কৌশল কী? এগুলো আসলে ব্যক্তিভেদে আলাদা হয়। কারণ, একজনের জন্য যেটি কাজ করবে অন্যজনের জন্য নাও করতে পারে। যেমন- কেউ সকালে পড়তে করতে পছন্দ করে, আবার কেউ কেউ রাতে পড়াকে সহজ মনে করে। এজন্য একজন শিক্ষার্থীকে খুঁজে বের করতে হবে তার জন্য কোনটি ভালো হবে।
অনুপ্রাণিত থাকা
ভালো শিক্ষার্থীরা সবসময় অনুপ্রাণিত থাকে। তাই কারো উদ্দেশ্য যদি হয় ভালো ছাত্র হওয়া তাহলে এটি মানতে হবে এবং নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখতে হবে। কিন্তু, কীভাবে? এই ‘কীভাবে’র অনেকগুলো উত্তর আছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো, ভয় না পাওয়া। পড়ালেখাকে মোটেও ভয় পাওয়া যাবে না। যত কঠিন হোক না কেন সেটিকে সহজভাবে নিতে হবে। তাহলেই অনুপ্রাণিত থাকা সম্ভব। আরেকটি উত্তর হলো, জীবন ও শেখাকে উপভোগ করা।
এক্সট্রাকারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি
সারা বছর ধরে শুধু সিলেবাস নিয়ে পড়ে থাকতে হবে তা কিন্তু নয়। আমরা যদি ভালো শিক্ষার্থীদের দিকে খেয়াল করি, তাহলে দেখব তারা শুধু পড়ালেখা নয়- অনেক কিছুতেই নিজেকে ব্যস্ত রাখে। সিলেবাসের বাইরে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করে। তা তাদের মেধা বিকাশে অবদান রাখে। ভালো শিক্ষার্থী হতে হলে নিজেকে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখা জরুরি। এতে মাথার মধ্যে অন্য কোনো চিন্তা জায়গা পাবে না।
সময়োপযোগী হওয়া
যেসব শিক্ষার্থী সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করে না, তারা কখনোই ক্লাসে বা ক্লাসের বাইরে ভাল পারফর্ম করতে পারে না। তাই ভালো শিক্ষার্থী হতে সময়োপযোগী হতে হবে। সময়ানুবর্তীতা সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি।
ভালো শ্রোতা হওয়া
ভালো শিক্ষার্থীরা সবসময়ই ভালো শ্রোতা। যদি মনোযোগ সহকারে না শোনা হয় তাহলে শিক্ষকও বিরুক্ত হন। যেকোনো বিষয়ে ভালোভাবে শেখার ৮০ শতাংশ নির্ভর করে মনোযোগ সহকারে শোনার ওপর।
শেষ কথা এই পরামর্শগুলো শুধু পড়লেই ভালো শিক্ষার্থী হওয়া যাবে না। বরং ফল পেতে প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তবে, মনে রাখতে হবে ভালো শিক্ষার্থী হওয়া মানে শুধু ভালো রেজাল্ট নয়। বরং ভালো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ।