খরচ বাঁচিয়ে সাশ্রয়ী চলাফেরার জন্যই মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো মোটরবাইক ব্যবহার করে। সেই হিসাবে দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে তেলের উচ্চমূল্য বাইকারদের চিন্তার বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর মোটরবাইক যদি ভালো মাইলেজ না দেয় তাহলে পকেটের উপর চাপ পড়ে। তাই আজ আমরা এমন কিছু কাজ এবং নিয়ম নিয়ে কথা বলব যেগুলো অনুসরণ করলে আপনার বাইক সর্বোচ্চ মাইলেজ হোক সেটা এফআই হোক অথবা কার্বুরেটর ইঞ্জিনেরই হোক না কেন।
বিভিন্ন কোম্পানি তাদের বাইকের বিক্রি বাড়াতে এফআই ইঞ্জিনের মাইলেজ বেশি, কার্বুরেটর ইঞ্জিনের মাইলেজ কম-এমন কিছু অপপ্রচার চালায়। এফআই অবশ্যই উন্নত প্রযুক্তি এবং এতে জ্বালানি সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি নিখুঁত হওয়ায় তেলের অপচয় কিছুটা কমে আসে। এফআই ইঞ্জিন ঠান্ডা অবস্থায় দ্রুত স্টার্ট নেয়। এমন ছোট ছোট কিছু বাড়তি সুবিধা এফআই ইঞ্জিনে পাওয়া যায়। তবে এফআই ইঞ্জিন মেইনটেইন করা, ক্লিন করা বেশি সময়সাপেক্ষ, অ্যাডভান্সড টুল প্রয়োজন হয় এবং ব্যয়বহুল। এছাড়া তেলের মান ভালো না হলে এফআই ইঞ্জিন যথেষ্ট ভোগান্তির কারণ হয়।
অন্যদিকে কার্বুরেটর ইঞ্জিনে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো মেইন্টেনেন্স লাগে না, ক্লিনিংয়ে কোনো অ্যাডভান্সড টুলস লাগে না, এমনকি পুরো কার্বুরেটর নতুন লাগাতেও এফআই সিস্টেমের তিন ভাগের এক ভাগ খরচও হয় না। মনে রাখবেন,এফআই এবং কার্বুরেটর দুটি আলাদা জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা মাত্র। বাইকের পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে দুটি ইঞ্জিনের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য নেই।
যাহোক, মূল আলোচনায় আসি, মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ মাইলেজ পেতে নিচের ১০টি নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন।
১। নিয়মিত আপনার মোটরসাইকেলের চাকা পরীক্ষা করে দেখবেন যে, চাকাগুলো সহজভাবে ঘুরছে কিনা। চাকা জ্যাম হয়ে যাওয়ার একটি সাধারণ কারণ হচ্ছে, ব্রেক খুব বেশি টাইট হয়ে যাওয়া। এছাড়া, চাকার বেয়ারিং জ্যাম হয়ে গেলেও আপনার মোটরসাইকেলের চাকা ঘুরতে সমস্যা হবে। চাকার জ্যামের কারণে চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিনে বেশি চাপ পরে। এর ফলে আপনার বাইকের মাইলেজ কমে যেতে পারে। চাকার জ্যামকে কখনই অবহেলা করবেন না। জ্যামের কারণ খুজে বের করে দ্রুত সমাধান করুন।
চাকার জ্যাম হওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে, চেইন অতিমাত্রায় টাইট থাকা এবং চেইন শুকনো থাকা। চেইনে যদি অতিরিক্ত ময়লা থাকে আর নিয়মিত লুব্রিকেন্ট করা না হয়, তবে আপনার বাইকের মাইলেজ কমে যেতে পারে । তাই চেইন নির্দিষ্ট মাত্রায় টাইট রাখুন যেন হাফ থেকে এক ইঞ্চির মত স্ল্যাক লেভেল থাকে। নিয়মিত চেইন পরিস্কার করে গিয়ার অয়েল দিতে পারেন।
২। বাইকের পিস্টন রিং দুর্বল হয়ে গেলেও মাইলেজ কমে যেতে পারে। পিস্টন রিং দুর্বল হলে ইঞ্জিন অয়েল পিস্টন চেম্বারে প্রবেশ করে পেট্রলের দাহ্য ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে মাইলেজ কমে যায়।
৩। ভালভ ক্লিয়ারেন্স আপনার মোটরসাইকেলের মাইলেজ ও শক্তি কমিয়ে আনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। অতিরিক্ত টাইট ভালভ ইঞ্জিনের শব্দকে হ্রাস করে কিন্তু এর প্রভাব পড়ে টাইমিং চেইনের উপর । এর ফলে ইঞ্জিন ভালোভাবে ঘুরতে পারে না। এটা, ইঞ্জিনের জ্বালানি খরচ বাড়িয়ে দেয় এবং সাথে সাথে টাইমিং চেইনটাও দ্রুত নষ্ট হয়।
একইভাবে বেশি ভালভ ক্লিয়ারেন্সও মাইলেজের জন্য ভাল নয় । তাই, ভালব ক্লিয়ারেন্স যত নিখুঁত হবে আপনার বাইকের পারফরমেন্স তত ভালো হবে এবং ভালো মাইলেজ পেতে সাহায্য করবে। অবশ্যই ফিলার গেজ ব্যবহার করে ভালভ ক্লিয়ারেন্স অ্যাডজাস্ট করতে হবে।
৪। ইউজার ম্যানুয়াল অনুসরণ করে উৎপাদনকারী নির্ধারিত গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে বাইক থেকে ভালো মাইলেজ পাওয়া যায়।
৫। ভাল মানের স্পার্ক প্লাগ ব্যবহার করলে ভালো মাইলেজ পাওয়া যায়। প্রতি ৮-১০ হাজার কিলোমিটার পর পর প্লাগ চেঞ্জ করে ফেলাটা সবচেয়ে ভালো।
৬। দুই সপ্তাহ পর পর টায়ার প্রেশার চেক করুন এবং রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী উভয় চাকায় টায়ার প্রেশার মেইনটেইন করুন।
৭। স্টক সাইজের চেয়ে মোটা এবং ভারি টায়ার ব্যাবহার করলে ফ্রিকশন বাড়ে। মোটা চাকায় ব্রেকিং কিছুটা ভাল হলেও বাইকের মাইলেজ কমে যায়।
৮। ভালো মাইলেজ পেতে চাইলে এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত এবং এটি অতিরিক্ত ময়লা হলে রিপ্লেস করতে হবে। ময়লা এয়ার ফিল্টার মোটরসাইকেলের মাইলেজ কমিয়ে দেয়।
পাশাপাশি ভালো মানের ফুয়েল ব্যাবহার, গ্রাজুয়ালি স্পিডিং করা, স্পিড অনুযায়ী সঠিক গিয়ারে বাইক চালানো এবং ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহারের অভ্যাস আপনার বাইকের মাইলেজ বাড়াতে পারে।
আপনার বাইক কত মাইলেজ দিচ্ছে তা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। হ্যাপি বাইকিং।