রোজায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে শরীরে পানির চাহিদা বেশি থাকে। আবার অনেকক্ষণ খাবার না খাওয়ার কারণে শরীরে শক্তিরও ঘাটতি হয়। যার কারণে রোজা রেখে আমরা অনেক খাবারই খাই; কিন্তু বিশেষ কিছু খাবারের দিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত। খাদ্যতালিকায় কিছু সুপারফুড যুক্ত করা হলে শরীর একই সঙ্গে পুষ্টি এবং শক্তি পাবে। এসব খাবার শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
এ ধরনের কিছু খাবার হলো-
প্রতিদিন দু-তিন লিটার পানি : দেহের একটি আবশ্যিক উপাদান পানি। শরীরের পুরো ওজনের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ হচ্ছে পানি। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ৪০ কেজি পানি থাকে। খাবার হজম ও শোষণে সাহায্য করা ছাড়াও দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ যেমন-ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া মূত্র ও ঘামের সঙ্গে নিষ্কাশন করে। এভাবে পানি দেহকে সুস্থ রাখে। রোজার সময় প্রতিদিন দু-তিন লিটার পানি পান করা উচিত। পানি গ্রহণের পরিমাণের সঙ্গে পানি ত্যাগের পরিমাণের (যেমন-মূত্র, মল, ঘাম) দিকে খেয়াল রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ-খাবার পানির পরিমাণ ২০০০ মিলি হলে মূত্রের মাধ্যমে পানি ব্যয় হবে ২০০০ মিলি, এর বেশি ব্যতিক্রম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিদিন ইফতারে রাখুন ফলমূল : ইফতারে ফলের পরিমাণ বাড়ানো উচিত। ফল বলতে বিদেশিই হতে হবে বা দামি ফল হতে হবে তা নয়-দেশীয়, সস্তা মৌসুমি ফল প্রতিদিন ইফতারে রাখা যেতে পারে। আপেল-আঙুরের পরিবর্তে ইফতারে স্থান পেতে পারে আমড়া, পেয়ারা, গাব, জাম্বুরা, পাকা পেঁপে, আনারস, তরমুজ ইত্যাদি।
খেজুর : রোজার সর্বোত্তম ফল হিসাবে খেজুর পরিচিত। খেজুরে থাকা গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজের মতো প্রাকৃতিক শর্করা শরীরে দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, খেজুরে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এ কারণে ইফতারে এই ফলটি যোগ করা জরুরি।
খাদ্যতালিকায় থাকুক দুধ বা দই : রমজানে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় দুধ থাকা দরকার। হাড় ও দাঁতের খাবার হচ্ছে ক্যালসিয়াম এবং দুধ হচ্ছে ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। দেহে খনিজ উপাদানের মধ্যে ক্যালসিয়ামের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে মোট ১২০০-১২৫০ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, যার ৯৯ ভাগ হাড় ও দাঁতে থাকে। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় নরম ও দুর্বল হয়ে পড়ে, শিশুদের রিকেট ও বয়স্ক নারীদের ওসটিওম্যালেসিয়া দেখা দেয়। এ ছাড়া স্নায়বিক উত্তেজনা ও খিঁচুনি দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের উৎস দুধ ও দইয়ের মধ্যে টক দই উৎকৃষ্ট, যা সহজে হজম হয় এবং এর ক্যালসিয়াম শোষণক্ষমতাও বেশি। এটি প্রোটিনের ভালো উৎস, যাতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়, যা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে, শরীরকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখে। টক দইয়ের অ্যাসিটিক এসিড কার্ডিয়াক মাসল টোন বাড়ায় এবং চর্বি কাটিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরে পানির চাহিদা মেটায়।
ওটস: রোজার সময় শরীরে শক্তি জোগাতে ওটসের জুড়ি নেই। ওটস এমন একটি কার্বোহাইড্রেট যা ধীরে ধীরে শক্তি প্রকাশ করে, এ কারণে এটি খেলে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষুধা অনুভূত হয় না। ওটসে পর্যাপ্ত পরিমাণে বি ভিটামিন রয়েছে, যা খাবারকে শক্তিতে রূপান্তর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত পুষ্টি এবং স্বাদের জন্য ওটমিলে ফল, বাদাম এবং বীজ যোগ করতে পারেন।
বাদাম এবং বীজ: বাদাম, আখরোট, চিয়া বীজ এবং ফ্ল্যাক্সসিড হল পুষ্টিকর স্ন্যাকস যা শরীরে শক্তি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এসব খাবারে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন এবং ফাইবার রয়েছে। বাদাম এবং বীজ শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। ইফতার বা সেহেরিতে দইয়ের মধ্যে বাদাম এবং বীজ যোগ করে খেতে পারেন। উপকার পাবেন।
বেরি: বেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনের ভালো উৎস। এই ফল ফ্রি র্যাডিক্যালের সাথে লড়াই করে। এর ফলে ক্লান্তি দূর হয়, শরীর শক্তি পায়। ওটমিল বা দইয়ের সাথে বেরি যোগ করতে পারেন।
মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলু ভিটামিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার। মিষ্টি আলু খেলে শরীর দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করে এবং শক্তি পায়। ইফতারে এই খাবারটি অনায়াসে যোগ করতে পারেন।