যোগ বা ইয়োগা
ইয়োগা বা অভ্যাস হল শরীর আর মন যুক্ত করে সুস্থ থাকার এক প্রাচীন পদ্ধতি। আসলে ইয়োগা বা যোগ তো শুধু ব্যায়াম নয়, যোগ কথার আসল অর্থ হল চেতনা।
আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যোগ বা ইয়োগা আসলে কী? এটা কি শুধু শরীরকে বাঁকাজোকা করে বসে থাকা? নাকি এর মানে রয়েছে!
ইয়োগা করে কি সত্যি আমাদের কোনো উপকারে আসবে? যদি সত্যি কোনো উপকারে আসে তাহলে সে উপকারগুলো আসলে কী বা এর যুক্তিসঙ্গত কোনো ব্যাখ্যা কি আছে?
যোগ ব্যায়াম প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তুনু সঙ্গে কথা বলে ইয়োগার নানা দিক জানাচ্ছেন তৌহিদ মামুন।
ইয়োগা কথার সাধারণ অর্থ ইউনিয়ন বা মিলন। এ মিলন কার সঙ্গে কার। আপনার সঙ্গে এ সম্পূর্ণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের। মানুষের দেহ, মন ও এনার্জি বা শক্তি- এ তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে আমাদের শরীর চলে। এর কোনো একটি যদি ঠিকঠাক কাজ না করে তাহলে আমাদের শরীর ঠিকভাবে কাজ করবে না। আর ইয়োগা ঠিক এ কাজটাই করে থাকে এ তিনটির সমন্বয় করে। যদিও ইয়োগা নিয়মে মানুষকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. আন্না মায়াকোশা বা খাবারের মাধ্যমে যে শরীর তৈরি হয়েছে তাকে বুঝায়।
২. মানো মায়াকোশা বা যেটা আমাদের মনকে বোঝায়।
৩. প্রাণা মায়াকোশা বা যেটা শরীরের শক্তিকে বোঝায় বা এনার্জিগুলোকে বুঝায়। এ তিনটি ভাগ শারীরিক যেগুলো আমরা অনুভব করতে পারি। বাকি দুটি হল দৃশ্যমান নয় যেগুলো আমরা অনুভব করতে পারি না। যখন ওপরের তিনটি ব্যালেন্সভাবে কাজ করলে বাকি দুটিকে আমরা এক্সিপ্রিয়েন্স বা অনুভবন করতে পারি। বাকি দুটি হল-
৪. ভিগনাম মায়াকোশা বা বিজ্ঞান বা তার অর্থ বিশেষ জ্ঞান যা আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়র বাইরে।
৫. আনান্দা মায়াকোশা বা আনন্দ এটা নন-ফিজিক্যাল যেটা আমরা অনুভব করি মাত্র।
তাই ইয়োগার উদ্দেশ্য শরীরকে স্বাস্থ্যবান করা নয়। বরং তার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর মিলন ঘটিয়ে ফিজিক্যাল ও নন-ফিজিক্যাল তার মধ্যে ইউনিয়ন বা মিলন সৃষ্টি করা। যাতে সর্বক্ষেত্রে আনন্দের সঙ্গে নিজের সর্বোচ্চ পারফর্মেন্স দিতে পারেন।
আসন ও এর সতর্কতা
মানব জীবন হল আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আমাদের অস্তিত্ব হিসেবে আমরা পেয়েছি দেহ, মন ও আত্মা। আমাদের এই দেহ, মন ও আত্মা একীভূত করার নামই ইয়োগা বা যোগ।
নিয়মিত যোগচর্চার মাধ্যমে অসুস্থ শরীর রোগমুক্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সুস্থ শরীর আরও তেজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। চঞ্চল ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মন শান্ত হতে থাকে।
এ অবস্থায় বুদ্ধি দ্বারা আমরা শান্ত মনকে চালনা করতে পারি এবং আমাদের দেহও মনের সঙ্গে সমান তালে সাড়া দেয়। যোগানুশীলনের ধারাবাহিকতায় অশান্ত মন যখন সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত ও শান্ত হয়ে পড়ে তখন আমাদের ‘আত্মার’ উপলব্ধি হয়।
শীর্ষাসন
এই আসন হচ্ছে সব আসনের রাজা। এতে মস্তিষ্ক শুদ্ধ রক্তপ্রাপ্ত করে যার ফলে চোখ, কান, নাক ইত্যাদি আরোগ্যপ্রাপ্ত হয়।
পিটুইটারি ও পিনিয়াল গ্ল্যান্ডকে সুস্থ করে তুলে মস্তিষ্ককে সুস্থ করে।
স্মৃতি, মেধা বিকশিত করে।
হিস্টিরিয়া, হার্নিয়া, অণ্ডকোষ বৃদ্ধি ইত্যাদি রোগ দূর করে
স্বপ্নদোষ, নপুংসকতা, বন্ধ্যত্ব ইত্যাদি ধাতু রোগকে নির্মূল করে
মুখমণ্ডলে এক আভা এবং তেজের সৃষ্টি করে
অসময়ে চুল পড়ে যাওয়া এবং পেকে যাওয়া বন্ধ করে।
অষ্টবক্রাসন
বাহু এবং কব্জিকে প্রচণ্ড শক্তিশালী করে।
পেটের মাংসপেশিগুলোকে শক্তিশালী করে এবং চর্বি কমায়
মনোযোগ ও ভারসাম্য বাড়ায়
মহিলাদের মাসিক বিকৃতি দূর করে এবং মেনোপজ হওয়ার পর যেসব জটিলতা দেখা দেয় সেগুলো থেকে মুক্তি দেয়।
চক্রাসন
মেরুদণ্ডের হাড়কে নমনীয় করে যৌবন ধরে রাখতে সাহয্য করে। শরীরে স্ফূর্তি, শক্তি এবং তেজ বৃদ্ধি করে, কোমর ব্যথা দূর করে। নারীদের গর্ভাশয় বিকারকে দূর করে।
বীর ভদ্রাসন
বাঁধ, বাহু, পা, গোড়ালি এবং পিঠের মাংসপেশিগুলোকে পরিপুষ্ট করে শক্তিশালী করে তোলে, রক্ত সঞ্চালন ও শ্বসন প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।
ফুসফুস তথা বুকের প্রসারণ ঘটায়, অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম, সব ধরনের বাতরোগ, কফরোগ ও পিত্তের রোগ দূর করে।
ধাতুরোগ, শুক্রক্ষয়, সাইনাস, হাঁপানি, টনসিল ইত্যাদি রোগ দূর করে ও হৃদয়ের ধমনিতে আসা ব্লকেজ পর্যন্ত খুলে যায়।
উত্থিত পদ্মাসন
পেটের বাড়তি চর্বি কমায়, হাতে প্রচণ্ড শক্তি আনে, হাত ও কাঁধের পেশি পুষ্ট করে
গোমুখাসন
পুরুষের অণ্ডকোষ বৃদ্ধি, ধাতুরোগ, ডায়াবেটিস এবং স্ত্রীরোগে বিশেষ লাভকারী আসন ও সন্ধিবাত ও গেঁটে বাত দূর করে।
সতর্কতা
হৃদরোগী, উচ্চরক্তচাপ এবং কোমর যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা ব্যক্তিরা এ আসন করবেন না। যারা কাছের জিনিস দেখতে চশমা ব্যবহার করেন তারা এ আসন করবেন না। সর্দি-কাশি হলেও এই আসন করা উচিত নয়।
পুষ্টি:
আমরা যেসব ফল বা শাকসবজি খেয়ে থাকি প্রত্যেকটিতেই কিছু না কিছু পুষ্টি রয়েছে। পুষ্টিগুণ ছাড়া খাবার হয় না। কিন্তু কিছু খাবারে পুষ্টির পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, যেসব খাবারকে সুপারফুড হিসেবে ধরা হয়। এসব খাবার আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সমগ্র স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করে।
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা তাদের গবেষণায় এমনই কিছু খাবারের তালিকা করেছেন। এ প্রতিবেদনে বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর কিছু খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. অ্যালমন্ড ও আখরোট: ফ্যাটি অ্যাসিডের সবচেয়ে ভালো উৎস অ্যালমন্ড ও আখরোট এই দুটি বাদাম সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এ বাদাম হার্ট ও রক্তনালীর স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে সাহায্য করে।
২. আতাফল: সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় আতাফল রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এতে রয়েছে চিনি, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২ এবং পটাসিয়াম।
৩. বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক কই বা পোয়া মাছ, চিতল বা ফ্ল্যাট ফিশ, কড মাছ, ইল, নীল পাখনার টুনা, বিভিন্ন ধরনের স্যামন মাছ সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে অন্যতম। এসব মাছ তাদের পুষ্টিগুণের জন্য এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
৪. চিয়া সিড বা তিসি বীজ: গত কিছু বছর ধরে অন্যতম সর্বাধিক জনপ্রিয় পুষ্টিকর সুপারফুড হলো চিয়া বীজ। এ ছোট কালো বীজে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফাইবার রয়েছে।
৫. মিষ্টি কুমড়া ও বীজ: আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজের ভালো উৎস মিষ্টি কুমড়া ও এর বীজ। মিষ্টি কুমড়া কাঁচা কিংবা পাকা উভয় ক্ষেত্রেই পুষ্টিগুণে ভরপুর। প্রদাহ-বিরোধী উপাদান এবং উচ্চ পরিমাণে জিংক শরীরে ইমিউন সিস্টেমে সহায়তা করে।
৬. ধনেপাতা: ধনেপাতায় রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, লোহা ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো বেশ কয়েকটি উপকারি খনিজ। এছাড়া ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে-র জোগান দেয় এই পাতা।
আরো পড়ুন : করোনা রোধে খেতে হবে প্রোটিনযুক্ত খাবার
৭. মটরশুটি ও বরবটি: মটরশুটিতে প্রোটিন, উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, মিনারেল এবং দ্রবনীয় ভিটামিন রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিমের বিচির কথাও উঠে এসেছে এই তালিকায়।
৮. পাতাসহ পেঁয়াজ: পেঁয়াজ পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। পাতাসহ বিভিন্ন ধরনের পেঁয়াজ ও এর ডগাসহ ফুলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। বিশেষ করে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে-এর ভালো উৎস এটি।
৯. বাঁধাকপি: সব ধরনের বাঁধাকপিই পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে লাল বাধাকপিতে পুষ্টিগুণ একটু বেশি।
১০. হিমায়িত পালংশাক: হিমায়িত পালংশাক পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়া রোধ করে এবং ধরে রাখে। হিমায়িত পালংশাকে ম্যাগনেসিয়াম, ফলেট, ভিটামিন এ, বেটা ক্যারোটিন, জিজ্যানথিন থাকে। আর এজন্যই তাজা পালংশাকের তুলনায় হিমায়িত পালংশাকে বেশি পুষ্টিগুণ থাকে বলে ধারণা করা হয়। তবে তাজা পালংশাকও পুষ্টিগুণে কম নয়। এতে ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন থাকে প্রচুর পরিমাণে।
১১. মরিচ: মরিচের গুড়ায় বিভিন্ন ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল- ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন এ থাকে। সেই সঙ্গে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফেনেরিক উপাদান। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মরিচ যেমন ইয়ালাপিনো, কাঁচা মরিচে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো পুষ্টিগুণ।
১২. পুদিনাপাতা: পুদিনাপাতার উপাদান হৃদপিন্ডের জন্য উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান।
১৩. সরিষা শাক: সরিষা শাকে সিনিগ্রিন নামে এক ধরনের উপাদান থাকে।
১৪. লেটুস পাতা: পুষ্টিগুণে ভরপুর লেটুস পাতা যত তাজা থাকে তত এর পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।
১৫. কলা: বিভিন্ন ধরনের কলায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল এবং ডায়াবেটিক প্রতিরোধী উপাদান।
আরও পড়ুন: বেশি দিন বাঁচতে চান, এসব খাবার খান
১৬. টমেটো: কাঁচা এবং পাকা- দুই ধরনের টমেটোই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তবে পাকা টমেটোর তুলনায় কাঁচা টমোটো বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন বলে মতামত বিজ্ঞানীদের।
১৭. ডালিম: ডালিমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়া হার্ট-রক্তনালীর স্বাস্থ্যের উপকার ও প্রদাহবিরোধী উপাদানও রয়েছে এই ফলটিতে।
এছাড়া সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় আরো রয়েছে আদা, মিষ্টি আলু, শুকনো খেজুর, গাজর, কচুশাক, ব্রকলি, ফুলকপি, কমলা এবং কমলা জাতীয় ফল।