প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপের ফাইনাল, চূড়ান্ত সাফল্যের একেবারে তীরেও পৌঁছে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল তাদের। হার্দিক পান্ডিয়ার করা ২০তম ওভারের প্রথম বলেই লং অফে উড়িয়ে মারেন ডেভিড মিলার। সীমানা দড়ির কাছে অসাধারণ দক্ষতায় সূর্যকুমার যাদব সেটিকে তালুবন্দী করেন। কিন্তু সেই আউট নিয়ে সংশয় দূর হয়নি, যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে জোর বিতর্ক।
ওই ক্যাচ নেওয়ার সময় সূর্যকুমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সীমানার বাইরে চলে যান, তবে তার আগেই বল শূন্যে তুলে দিয়ে মাঠে ঢুকে ফের লুফে নেন ক্যাচটি। পরে রিপ্লে পরীক্ষা করে সেটিকে আউট বলে সিদ্ধান্ত দেন টিভি আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো। কিন্তু সেই আউট দেওয়ার সময় সীমানা দড়ির দিক থেকে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল দেখানো হয়নি। সেটি দেখানো হলে আর কোনো সংশয় থাকত না বলে মনে করছেন ক্রিকেটভক্তদের অনেকেই। যদিও ভারতীয় দর্শক থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকরা ওই ক্যাচকে আজীবন মনে রাখবেন বলে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন সূর্যকে।
ওই সময় মিলার আউট না হলে, সেটি ছয় বলে গণ্য হতো। ফলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হলেও হতে পারত। তাই ম্যাচের ফল নির্ধারণকারী মুহূর্ত নিয়ে কেন আম্পায়ার বাড়তি সময় নিলেন না, তা নিয়েই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। এ ছাড়া রিপ্লেতে সীমানা দড়িটিও কিছুটা সরে গেছে বলে দেখা যায়, কারণ ঘাসের ওপর বাউন্ডারি লাইনে সাদা দাগ স্পষ্ট। সেই দাগের ওপরই পা ছিল সূর্যকুমারের, যা সেই বিতর্ক আরও উসকে দিচ্ছে।
ক্রিকেটীয় আইনে সীমানাদড়ি সরে যাওয়া নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেই আইন তুলে ধরেছে ক্রিকেটের অ্যালমানাকখ্যাত উইজডেন। তারা বলছে, আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী ১৯.৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সীমানা চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত কোনো কঠিন বস্তু যদি কোনো কারণে বিঘ্নিত (সরে যায়) হয়, তাহলে সীমানাটি তার আসল অবস্থানে আছে বলে বিবেচিত হবে।’
এ ছাড়া ১৯.৩.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সীমানা চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত কোনো কঠিন বস্তু যদি কোনো কারণে বিঘ্নিত (সরে যায়) হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা ঠিক করতে হবে। খেলা চলতে থাকলে বল ডেড হওয়ামাত্রই এ কাজ করতে হবে।’ এমন নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে ম্যাচটিতে। কারণ সাদা দাগ থেকে সীমানা দড়ি সরে যাওয়ার পরও তা ঠিক করা হয়নি। সুতরাং মিলারের আউট এবং সূর্যের ক্যাচটি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তাকে অমূলক–ও বলা যাচ্ছে না।
এদিকে, ওই আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ (সাবেক টুইটার) বেন কার্টিস নামে একজন লিখেছেন, ‘এটা নিশ্চিতভাবে একবারের বেশি দেখা উচিৎ ছিল। কথাটা এমনিতেই বলছি। বাউন্ডারির দড়ি মনে হচ্ছে সরে গিয়েছিল।’
ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া ওই ক্যাচটি নিয়ে অনেক ছবি ভাইরাল হয়েছে অনলাইনে। যেখানে কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, সূর্যকুমার ক্যাচ ধরেছেন সাদা দাগে চিহ্নিত অংশ ও সীমানাদড়ির মধ্যখান থেকে। যা উল্লেখ করে আরেক টুইট পোস্টে রোহিত শঙ্কর নামে একজন লিখেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দুর্ভাগ্যজনক। দড়িটা মূল সীমানালাইন থেকে সরে গিয়েছিল। এটাই হলো বিষয়।’
উল্লেখ্য, মিলারের আউটের পর শেষ ৫ বলে প্রোটিয়ারা তুলতে পারে ৮ রান, ফলে জয় থেকে ৭ রান দূরত্বেই থামে তাদের বিশ্বকাপ অভিযান। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ শেষে মিলার-মার্করামদের চোখে জল আর একরাশ হতাশা। অন্যদিকে, ১৩ বছর পর বিশ্বমঞ্চে শিরোপাখরা কাটানোর উল্লাসে মাতোয়ারা রোহিত-কোহলি ও বুমরাহরা।