আগামীকাল সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হতে স্থানীয় বাসিন্দা, বিভিন্ন দেশের পর্যটকসহ লাখো মানুষ ইতোমধ্যে জড়ো হয়েছেন উত্তর আমেরিকায়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে তিন মিনিট ৪০ সেকেন্ড স্থায়ী পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখতে মুখিয়ে আছেন তারা। তবে ঝড়বৃষ্টি ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশের কারণে হয়তো তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ নাও হতে পারে। তা সত্ত্বেও সব ধরনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে রেখেছেন তারা। বসে নেই শহর কর্তৃপক্ষও।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে মেইন পর্যন্ত মূলত এই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। তাই এই পথ ধরে জড়ো হয়েছেন লাখো পর্যটক। এ সময় তারা মোবাইল ফোনে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের পাশাপাশি কথোপকথন করবেন। যার অতিরিক্ত চাপ পড়বে সেই সব মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক ও টাওয়ারের ওপরে। তখন হয়তো অনেককে ফোন কল দিয়েও নির্ধারিত গ্রাহকের সংযোগ পেতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে। অতিরিক্ত চাপকে মাথায় রেখে সেই অঞ্চলে আরও বেশি টাওয়ার স্থাপন করেছে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। খবর সিএনএন
এ বিষয়ে ভ্যারিসন এবং টি-মোবাইল অপারেটরের মুখপাত্র ক্রিস স্যারিকো জানিয়েছেন, ৮ এপ্রিলের সূর্যগ্রহণের কোনো প্রভাব আমাদের নেটওয়ার্কের ওপর পরবে না। তবে সূর্যগ্রহণ যেসব অঞ্চল থেকে পরিষ্কার দেখা যাবে, সেই সব অঞ্চলে জড়ো হবে লাখো মানুষ। তাদের নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সেবা নিশ্চিত করতে সেই অঞ্চল অন্তত ৬০টি টাওয়ার সক্রিয় করেছে তারা।
সোমবার চাঁদের ছায়া সূর্যকে তিন মিনিট ৪০ সেকেন্ড সম্পূর্ণ ঢেকে রাখবে। পূর্ণগ্রাস এই সূর্যগ্রহণের সময় উত্তর আমেরিকার তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো ছাড়াও ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। ইতোমধ্যে বিরল এ সূর্যগ্রহণ দেখতে প্রস্তুত এসব দেশের কোটি মানুষ।
দুপুর ১টা ৫২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে শুরু হয়ে ধীরে ধীর সূর্যকে ঢাকতে থাকবে চাঁদ। তবে বিকেল ৩টা ৭ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে পূর্ণগ্রাস শুরু হয়ে শেষ হবে ৩টা ১১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে। অর্থাৎ, তিন মিনিট ৪০ সেকেন্ড স্থায়ী হতে পারে মহাজাগতিক ঘটনাটি। এ ধরনের বিরল আরেকটি ঘটনা দেখতে মানবজাতিকে অপেক্ষা করতে হবে ২০৪৪ সাল পর্যন্ত।
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ একই সরল রেখায় অবস্থান করে, চাঁদ সূর্যের আলোকে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এ সময় কয়েক মিনিটের জন্য আকাশ এতটাই অন্ধকার হয়ে যায় যে, মনে হয় সেটা রাতের আকাশ। আর একেই বলা হয় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগামী ৮ এপ্রিল যেভাবে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে এমনটি আগামী দুই দশকে আর দেখা যাবে না। তবে আশঙ্কা রয়েছে বিরল এই সূর্যগ্রহণটি মেঘ ও বজ্রঝড়ে ঢাকা পড়তে পারে। অন্যদিকে, প্রায় সাড়ে চার দশক পর প্রথমবারের মতো বিরল সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে যাচ্ছে কানাডাবাসী। পূর্ণাঙ্গ এই সূর্যগ্রহণ দেখতে দেশটির নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কাছে জড়ো হতে পারেন অন্তত ১০ লাখ দর্শনার্থী।
বিরল এই সূর্যগ্রহণ সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে মেক্সিকোর মাজাটলান, টরিওন, টেক্সাসের সান অ্যানটোনিও, অস্টিন, অকো, ফর্ট ওর্থ এবং ডালাস, আরকানসাসের লিটল রকি, মিসৌরির এটি লুইস, কেন্টাকির লুইসভিলে, ইন্ডিয়ানার ইন্ডিয়ানাপোলিস, কলম্বাবাসের ডেটন, ওহিও’র টোলেডো এবং কেলিল্যান্ড, মিশিগানের ডেট্রয়েট, পেনসিলভানিয়ার ইরি, নিউ ইয়র্কের বাফেলো, রোসেস্টার এবং সিরাকাস এবং কানাডার হেমিলটন, টরেন্টো ও মন্ট্রিয়াল থেকে।
তবে বিরল সূর্যগ্রহণ দেখা নিয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পূর্ণ এই সূর্যগ্রহণ খালি চোখে দেখতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এক্ষেত্রে চোখের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য বিশেষ ধরনের গ্লাস দিয়ে এটি দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে সাধারণ কোনো সানগ্লাস এ ক্ষেত্রে নিরাপদ হবে না, বিশেষভাবে তৈরি সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।