গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও দেশে রোজা পালিত হচ্ছে গরমে। একেবারে না পড়লেও দিনের বেলা বেশ গরম অনুভূত হয়। এই সময় রোজা পালনকারীরা স্বাভাবিকভাবেই একটু কষ্ট অনুভব করেন। সারাদিন আদ্রতা ও পানির অভাবের যখন মুখ-বুক-পেট শুকিয়ে যায়- ইফতারে তখন প্রশান্তি এনে দিতে পারে শীতল শরবত।
এমনিতেও পানি শূন্যতা পূরণে শরবতের কোনো বিকল্প নেই। তার ওপর রোজার দিনে বাহারি স্বাদের শরবত তৈরি করা হয়। এ তালিকায় রাখতে পারেন গাজরের শরবত।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজরের শরবত বা জুস খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। এই শরবত পানে প্রাণ জুড়ানোর পাশাপাশি নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে গাজরের শরবত। তাই ইফতারের টেবিলে গাজরের শরবত থাকতেই পারে।
গাজরের শরবত পানের উপকারিতাগুলো জেনে নিই –
উচ্চ পুষ্টিকর: গাজরের রসে ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট কম থাকে এবং প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে। এক কাপ (২৪০ মিলিগ্রাম) গাজরের রসে থাকে ৯৬ ক্যালোরি, প্রোটিন ২ গ্রাম, চর্বি ১ গ্রামের কম, কার্বোহাইড্রেট ২২ গ্রাম, চিনি ৯ গ্রাম, ফাইবার ২ গ্রাম। এছাড়া প্রতিদিনের চাহিদার প্রায় ৩৩ শতাংশ ভিটামিন এ, ২৩ শতাংশ ভিটামিন সি, ৩১ শতাংশ ভিটামিন কে, ১৫ শতাংশ পটাশিয়াম।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: গাজরের জুস পানে বদহজম এবং অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। সেইসঙ্গে হজম ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করে। গাজরের জুস লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। ফলে হজম শক্তির উন্নতি হয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে: গাজরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিষমুক্ত করে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। গাজরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও নানা ধরনের খনিজ যেমন, ফসফরাস পটাশিয়াম, ইত্যাদি থাকে যা হাড় গঠন, নার্ভাস সিস্টেমকে শক্ত করা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে: গাজরে ক্যারোটিনযুক্ত রঞ্জক পদার্থ রয়েছে। এ উপাদানটি ত্বককে আকর্ষণীয় করে তোলে।
টক্সিন দূর করাতে: গাজরে উপস্থিত ভিটামিন এ লিভারে গিয়ে শরীর থেকে নানা ধরনের টক্সিন জাতীয় খারাপ উপাদান পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এছাড়াও গাজরের এই উপাদান লিভার থেকে অতিরিক্ত চর্বি সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে গাজরের ফাইবার কোলন পরিষ্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর হাত থেকে রক্ষা করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে: গাজরের জুসে অ্যান্টি কারসেনোজনিক উপাদান রয়েছে, যা ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
ফুসফুস ভালো রাখতে: গাজরের উপকারী উপাদানগুলো ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া শ্বাসনালীর প্রদাহ দূর করে দেয়। গাজরের আলফা ক্যারোটিনসহ আরও কিছু উপাদান হৃদরোগ ও হৃৎপিন্ডের সুরক্ষায় ভালো কাজ করে।
বলুন তো এমন কী জিনিস,গরমও নয় ঠান্ডাও নয় তবুও ফুঁ দিয়ে খেতে হয়?
গাজরের শরবত যেভাবে বানাবেন
বাসায় গাজরের শরবত বানাতে পরিমাণমতো গাজর ভালো করে ধুয়ে উপরের সবুজ অংশ ও খোসা ছাড়িয়ে নিন। ভেতরের শক্ত অংশ ফেলে দিয়ে কুচি করে কেটে নিন। ব্লেন্ডারে গাজর, পরিমাণমতো পানি ও চিনি একসঙ্গে দিয়ে মিহি করে ব্লেন্ড করে ছেকে নিন। এর পর গ্লাসে ঢেলে বাদাম গুঁড়া ও বরফ কুচি দিয়ে ইফতারে পান করুন গাজরের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শরবত।